অনেকেই জানেন। অনেকেই জানেন না। তাঁর কথা। বিদ্রোহী কবির প্রয়াণ দিবসে বারবার মনে পড়ে মেদিনীপুরের সেই মেয়েটির কথা। ‘শ্রদ্ধা’ জানানোর অপরাধে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর।
১৯২৪ সালে ২৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুর সফরে এসেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ- এর উদ্যোগে কবিকে দেওয়া হয়েছিল সম্বর্ধনা। কবি সদ্য জেল ফেরত। অপরাধ, ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। নাম ‘আনন্দময়ীর আগমনে’।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহী, দেশপ্রেমিক, কবিকে মেদিনীপুর কলেজে সম্বর্ধনা জানানো হয়েছিল মহিলা সভার পক্ষ থেকে। কবির (NAZRUL ISLAM) কন্ঠে গান শুনে জনৈক শিক্ষক কন্যা কমলা দাস এতটাই বিভোর হয়ে পড়েছিলেন যে সম্মান জানাতে নিজের গলার মালা খুলে পরিয়ে দিয়েছিলেন কবিকে। এক মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতার শ্রদ্ধা নিবেদন।
বর্তমান সময়েও যেখানে গোঁড়া ধর্ম আর কুসংস্কারের কোপ, তৎকালীন সময়ে তা ছিল আরও বেশি। ভিন ধর্ম, মালা বদল, চরিত্র নিয়ে নানা কথা শুনতে হয়েছিল শিক্ষক কন্যাকে। তাঁর শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোর হিসেব চুকিয়ে ছিলেন আত্মহত্যা করে।
কতটা শিল্প – কতটা শিল্পী প্রেমী হলে এমনটা করা যায়! প্রশ্ন, কমলাদেবী জানতেন না এই শ্রদ্ধার্ঘ্যের পরিণাম কী হতে পারে সেই সময়? বেশ জানতেন। শুধু কবি, তাঁর বিদ্রোহ, গান ও গলায় মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। মাথায় ছিল, শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজেকে ধন্য করে তোলা।
এতটা ভালোবাসা যায় কোন গুনীকে? সব ভুলে হতভম্ব হয়ে! আসলে এও বিপ্লব। আর সেই বিপ্লব হয়েছিল বিপ্লবের মেদিনীপুরের মাটিতেই। জেদ। মৌলবাদী সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এক সাধারণ অসামান্যা। রুখে দাঁড়িয়েছিলেন শ্রদ্ধা জানাবেন বলেই। আর তারপরে সমাজের নাগপাশে ঢলে পড়েছিলেন মৃত্যুর কোলে।
- নিসর্গ নির্যাস