নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে ‘রাজনৈতিক শত্রুতা’ ভুলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি’র সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। গতকাল রবিবার (৩ নভেম্বর) ব্রিটেন ভিত্তিক বাংলা উপগ্রহ চ্যানেল ‘এস চ্যানেলের’ সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন হাসিনা জমানার বিদেশমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। যদিও ‘পলাতক’ প্রাক্তন বিদেশ মন্ত্রীর ওই মন্তব্য নিয়ে বিএনপির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

রবিবার ‘এস চ্যানেল’-এ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘আওয়ামী লীগ:  তটস্থ, হতাশ, কোনঠাসা?’ শীর্ষক এক বিতরর্ক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সভাতে অংশ নিতে গিয়েই হাসিনা জমানার বিদেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে ২০০৭ সালের মতোই ফের বিএনপির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে আওয়ামী লীগের কোনওও আপত্তি নেই। তাঁর কথায়, ‘১/১১ সরকারের সময় বিএনপির সঙ্গে একজোট হয়েই আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করেছিলাম এবং গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কিংবা বিএনপির মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য দিচ্ছেন সেগুলোর অনেকগুলোর সঙ্গে আমি একমত। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যদি প্রয়োজন হয়, অবশ্যই বিএনপির সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আমরা তৈরি আছি, এক্ষেত্রে কোনও দ্বিমত নেই। বিএনপি যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলছে, একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে তার সঙ্গে আমরা একমত। প্রয়োজনে বিএনপির সঙ্গে আমরা একযোগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কাজ করব।’

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ জুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যেমন মুজিবনগর সররকার গঠন করা হয়েছিল, তেমনই একটি প্রবাসী সরকার গঠন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের প্রত্যাবর্তন ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ‘পলাতক’ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে হাসিনা জমানার বিদেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রবাসী সরকার গঠনের চিন্তা না। এ ধরনের কোনও আলোচনা কারও সাথে হয়নি।’ বিপদের দিনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশত্যাগী  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টে ইসলামি জিহাদি ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলিকে বাংলাদেশের মাটিতে দাপিয়ে বেড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। তবুও সেনার প্রতি আস্থা হারাতে রাজি ননি ‘পলাতক’ বিদেশ মন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমাদের সেনাবাহিনী আমাদের গর্বের, অহঙ্কারের। আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত পেশাদার। সেনাবাহিনীকে যারা বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে আমি তাদের বিরুদ্ধে।’

৫ অগস্টের পরেই কার্যত ছত্রখান হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশে থেকে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। অনেকেই আত্মগোপনে চলে গিয়েছেন এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে দলের নেতা-কর্মীদের হতাশ না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই। পঁচাত্তরের পরে কঠিন সময় গিয়েছে এবং দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দল পরপর ৪ বার দেশের ক্ষমতা দখল করেছে। গোটা দেশ জুড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতত্বে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উপর আজকে যে নির্যাতন, নিপীড়ন হচ্ছে…তাদেরকে বলব, এই আঁধার কেটে যাবে এবং দেশে একটি সুষ্ঠু, স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সব কিছু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আছেন, সবার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছেন। তার মনোবল শতভাগ চাঙ্গা আছে।’