নিজস্ব প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার: গ্রামের মাতব্বরদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মেয়েকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাই চৌধুরী। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সবক শেখাতে আবদুল হাইয়ের পরিবারকে একঘরে করেছেন মোড়লরা। ‘সমাজচ্যূত’ হওয়ার কারণে গত মাসখানেক ধরেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। বিষয়টি ইতিমধ্যেই প্রশাসনের শীর্ষ মহলের গোচরে এসেছে। তুঘলকি ফরমান জারি করা স্থানীয় মসজিদ কমিটির পদাধিকারীদের ডেকে সতর্ক করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। অবিলম্বে আবদুল হাইয়ের পরিবারের বিরুদ্ধে জারি করা নিদান তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাই চৌধুরীর মেয়ে ঝর্ণা চৌধুরী ২০০৮ সাল থেকে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। মহিলাদের ক্ষমতায়নের পক্ষে সওয়াল করায় স্থানীয় মোড়লদের রোষের শিকার হন। সামাজিক মাধ্যমে ঝর্ণার নামে ব্যক্তিগত কুৎসাও শুরু হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা চলে যান তিনি। তাতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মোড়লরা। আমেরিকায় অবস্থানরত ঝর্ণার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে নানা কুৎসা প্রচার করা হয়। ঝর্ণা এক ভিনধর্মীকে বিয়ে করেছেন এই অভিযোগ তুলে স্থানীয় মসজিদ কমিটি সালিশি সভা বসিয়ে আব্দুল হাইয়ের পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়।’
যাঁকে ঘিরে এত কাণ্ড সেই ঝর্ণা চৌধুরী আমেরিকা থেকে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশ গিয়ে ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গিয়েছি-এমন গল্প ফেঁদেছে। স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটি সালিশি সভা বসিয়েছিল। গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাবা যেতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে আমার পরিবারকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়।’
কুলাউড়ার ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সামাজিকভাবে যেন কোনও ধরনের হয়রানি না করা হয়, তার জন্য অভিযোগ পাওয়ার পরেই আমি মসজিদ কমিটিকে সতর্ক করে দিয়েছি। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসব। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও নির্দেশ দিয়েছি।’