নিজস্ব প্রতিনিধি: ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কথা বললে উঠে আসে নাড়াজোল রাজ পরিবারের কথা। নাড়াজোল রাজপরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল জাতির জনক মহত্মা গান্ধি’র। এই বাড়িতেও এসেছিলেন গান্ধিজি। দেবেন্দ্রলাল খান (DEBENDRA LAL KHAN) গান্ধিজির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই ‘রাজ’ উপাধি থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। এখানে হয় দুর্গাপুজোও (DURGA PUJA)। গান্ধিজির (MAHATMA GANDHI) ১৫৩ তম জন্মদিবসে জেনে নেওয়া যাক কিছু কথা।
নাড়াজোল (NARAJOLE) রাজা নরেন্দ্রলাল খাঁন এবং দেবেন্দ্রলাল খাঁন যুক্ত ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় গান্ধিজি মোট ৪ বার এসেছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুরে। এর মধ্যে একাধিকবার তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল দেবেন্দ্রলালের। তিনি গিয়েছিলেন নাড়াজোল রাজবাড়িতেও।
১৯২৫ সালের ৫ জুলাই সন্ধ্যার সময় গান্ধিজি ট্রেনে করে খড়গপুর থেকে এসেছিলেন মেদিনীপুরে (MIDNAPORE)। উল্লেখ্য, তিনি চিত্তরঞ্জন সেবাসদনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে মেদিনীপুর জেলা সফরে এসেছিলেন ৪ জুলাই। দুপুর ২টোর সময় নেমেছিলেন খড়গপুর স্টেশনে। ফিরে আসা যাক, ৫ জুলাইয়ের কথায়। মেদিনীপুর স্টেশনে এসে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন দেবেন্দ্রলাল খাঁন এবং তাঁর ভাই বিজয় খাঁন। তারপর তাঁরা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন গোপগড় প্রাসাদে। এখানেই এখন ‘রাজা নরেন্দ্রলাল খাঁন মহিলা মহাবিদ্যালয়’। তারপরে ৬ জুলাই নাড়াজোল কাছারি থেকে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন, হরিজনদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার ও অস্পৃশ্যতা বর্জন প্রসঙ্গে। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘পল্লী সমাজ’ কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য। ৭ জুলাই নাড়াজোল রাজবাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেও একই প্রসঙ্গে বক্তৃতা দেন। সেই সঙ্গে আহ্বান জানান, চরকা সুতো কাটা এবং খাদির কাপড় ব্যবহারের। বার্তা দিয়েছিলেন, মাদকদ্রব্য বর্জনের।
উল্লেখ্য, দেবেন্দ্রলাল খাঁনের আর্থিক সহযোগিতায় জাঠা ক্যাম্প চালু হয়েছিল মেদিনীপুর শহরের কর্ণেলগোলায়। তা হয়েছিল কর্ণেলগোলার কাছারি ক্যাম্পেই। যোগ দিয়েছিলেন জেলার সমস্ত সত্যাগ্রহীরা। এই আয়োজন ছিল লবণ আইন প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে। ডাণ্ডি অভিযানের সমর্থনে। অন্যদিকে, পিছাবনি লবনকেন্দ্রে তখন আন্দোলন চলছে জোরকদমে। মেদিনীপুরের সত্যাগ্রাহীদের কড়া হাতে দমন এবং জেল নিক্ষেপ করেছিল ইংরেজরা। গর্জে উঠেছিলেন দেবেন্দ্রলাল। তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে সংহতি জানিয়েছিলেন গান্ধিজি।
১৯৩৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ট্রেন দাঁড়িয়েছিল খড়গপুরে। গান্ধিজি যাচ্ছিলেন ওড়িশা। খড়্গপুর স্টেশনে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন দেবেন্দ্রলাল, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল প্রমুখ।
এবারে পুজো সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নেওয়া যাক, এই রাজ পরিবারের পুজো প্রায় ৬০৯ বছরের প্রাচীন। পুজোর প্রচলন হয়েছিল ৮২০ বঙ্গাব্দে। তবে দেবী দুর্গার আরাধনায় ব্রাত্য রাজপরিবারের নারীরাই! এখানে আরাধনা হয় অষ্টধাতুর দেবী দুর্গার। তাঁর সঙ্গে তাঁর সন্তানসন্ততি থাকে না। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে।
বর্ধমান রাজার নায়েব ছিলেন উদয় নারায়ণ ঘোষ। তিনি শিকার করতে এসেছিলেন নাড়াজোলে। শিকার করে ফেরার পথে তিনি না কি দেখতে পেয়েছিলেন এক অদ্ভূত দৃশ্য। একটি বক তাড়া করছে বাজকে! রাতে তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন, যে ওই জঙ্গলেই রয়েছে দেবী দুর্গার অষ্টধাতুর মূর্তি। তা উদ্ধার করে আরাধনা করার। তারপর মূর্তি উদ্ধার করে এনে তিনি এখানের জঙ্গল পরিষ্কার করে নির্মাণ করেন বাড়ি। সেই থেকেই এখানে প্রচলন দুর্গাপুজোর।