-273ºc,
Saturday, 3rd June, 2023 3:59 am
নিসর্গ নির্যাস: দেবী সরস্বতী (SARASWATI) বিদ্যার দেবী। বসন্ত পঞ্চমী বা শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে আরাধনা হয় দেবীর। কিন্তু জানেন কি কে এই সরস্বতী?
রূপ ও পুজো:
যুগ সরস্বতী, নীল সরস্বতী বিভিন্ন রূপে পূজিতা হন দেবী। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও বৌদ্ধ, জৈনরা দেবীর উপাসনা করে থাকেন। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ছাড়াও মায়ানমার, জাপান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ায় বাগদেবী পূজিতা হন। লাতিন, গ্রিসেও সরস্বতী সমগোত্রীয় দেবীর আরাধনা প্রচলিত। কখনও দেবী দ্বিভূজা, কখনও বা চতুর্ভূজা।
পুরাণ:
পার্বতী, লক্ষ্মী, সরস্বতী এই ত্রি-দেবীর মধ্যে অন্যতম হলেন সরস্বতী। স্কন্দ পুরাণ অনুযায়ী, প্রজাপিতা ব্রহ্মা’র মানসকন্যা সরস্বতী। তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে ব্রহ্মা মিলিত হতে চেয়েছিলেন। সরস্বতী আত্মরক্ষা করার জন্য বিভিন্ন প্রাণী’র রূপ ধারণ করতে থাকেন। দেবীকে অনুসরণকারী ব্রহ্মাও সেই প্রাণীর রূপ নিতে থাকেন। এভাবেই বারবার মিলিত হওয়ার ফলে মর্ত্যে প্রাণী জগৎ- এর সৃষ্টি হয়েছে। প্রজাপিতার এই দুরাচারের জন্যই দেবাদিদেব শরবিদ্ধ করেছিলেন তাঁকে। এরপরে শিবের শরণাপন্ন হয়ে তপস্যা শুরু করেছিলেন ব্রহ্মা জায়া গায়ত্রী। এরপরেই প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন প্রজাপিতা। ‘কুলীন’ এই অভিশপ্ত দেবতারই কোনও মন্দির নেই, পুষ্কর ছাড়া।
প্রজাপিতা ব্রহ্মা সর্বরত্ন শিলা নিক্ষেপ করেছিলেন পুষ্করের জলে। নির্মিত হয়েছিল মন্দির। তিনি চেয়েছিলেন, এখানেই অধিষ্ঠান করুক সরস্বতী। দেবী তখন পাতাল নিবাসী। ব্রহ্মা বললেন, তিনি ত্রি-সন্ধ্যা তর্পণ করবেন দেবীর উদ্দেশ্যে। সরস্বতী দেবীর মত নিয়ে খনন করা হল হ্রদ। সেখানেই বাস করতে থাকলেন দেবী। আবার অন্য মতে, সরস্বতী হলেন শিব-পার্বতী কন্যা।
দেবীভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, দেবী নারায়ণ পত্নী। কৃষ্ণের জ্বিহাগ্র থেকেই তাঁর আবির্ভাব। আদ্যা প্রকৃতির তৃতীয় অংশে দেবীর জন্ম। শম্ভু- নিশুম্ভ বধ করতে দেবী চণ্ডিকার দেহ থেকে আবির্ভাব হয় ‘কৌষিকী’ রূপী সরস্বতীর। মার্কণ্ডেয় পুরাণেও এই কথা বলা হয়েছে।
কথিত আছে, নারায়ণ জায়া তিন দেবী। লক্ষী, গঙ্গা ও সরস্বতী। গঙ্গা ও নারায়ণ পরস্পরের মধ্যে হাসাহাসি করলে তিন সতীনের মধ্যে বিবাদ দেখা যায়। এরপরেই গঙ্গার অভিশাপে সরস্বতী মর্ত্যে নদী হিসেবে প্রবাহিত হতে থাকেন। দেবী সরস্বতী যেন ত্রিরূপী। একদিকে তিনি নারায়ণ সঙ্গিনী, একদিকে নদী ও অন্যদিকে প্রজাপিতা জায়া।
শুক্ল যজুর্বেদে বর্ণিত হয়েছে, দেবরাজ ইন্দ্র অসুস্থ থাকার সময় দেবী সরস্বতী গান, বাজনা ও শুশ্রূষার মধ্য দিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তুলেছিলেন।
বায়ুপুরাণ অনুযায়ী, দেবাদিদেবের তাণ্ডবে জগৎ সংসার ধ্বংস হলে পুনরায় ব্রম্ভাণ্ডকে শিক্ষা, শিল্প আর রূপ-লাবণ্যে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে প্রজাপিতার মানসকন্যা হিসেবেই দেবীর জন্ম।
পদ্মপুরাণ অনুযায়ী, ঋষি কাশ্যপের স্ত্রী সরস্বতী। তিনি দক্ষরাজের কন্যা।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে দেবী নারায়ণ ঘরণী।
গরুড় পুরাণে সরস্বতী হলেন তুষ্টি, পুষ্টি, শ্রদ্ধা, ঋদ্ধি, প্রভা, কলা, মেধা ও স্মৃতি শক্তি।
তবে দেবী কে?
পুরাণ দেখলে দেবী কখনও প্রজাপিতা জায়া। কখনও নারায়ণের স্ত্রী। কখনও বা কৃষ্ণ থেকে আবির্ভূতা দেবী। কখনও দেবীর জন্ম চণ্ডী থেকে। আবার দেবী কখনও শিব কন্যা। একই ভাবে গঙ্গা কখনও সরস্বতীর মাতৃসম। কখনও বা সতীন। লক্ষী কখনও বাগদেবীর বোন, কখনও বা সতীন। কখনও বা তিনি দুর্গা কন্যা। কখনও তিনিই ত্রিদেবীর এক অন্যতম দেবী।
ধর্ম আসলে সাহিত্য। এই সাহিত্য মানে মিলন ক্ষেত্র। এত রূপ হলো আসলে একেশ্বরের প্রতীক। মানস কল্পনায় সেই প্রতীক বিভিন্ন রূপে আবির্ভূতা। তাঁর কোনও দেশের সীমানা নেই, তাঁর অস্তিত্ব শুধুই রয়েছে শিল্প,সাহিত্য ও জ্ঞান চর্চার প্রসারতায়।