প্রতিটা অলি-গলিতে বা মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিপ্লব যদি থেকে থাকে তবে তা মেদিনীপুরে (MIDNAPORE)। রাজনীতি হোক বা অরাজনৈতিক আন্দোলন, পথ দেখায় আমার মেদিনীপুর। কেউ বলুক ছাই না বলুক সেকথা সব্বাই মানে।
সালটা ১৯৩৯। স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ‘মেদিনীপুর’ নামেই ইংরেজদের বুকে ভয়, হিংসা। আন্দোলনের পথ দেখাচ্ছেন বিমল দাশগুপ্ত, কিষাণ সাহা। ঝাঁপিয়ে পড়ছে অগুনতি যুবক।
মেদিনীপুর শহরের কর্ণেলর্গোলা থেকে ধর্মা যাওয়ার পথে ডানদিকের গলি দিয়ে এগোলেই লাল দিঘি। দু’দিক নীচু। মধ্যিখানের রাস্তা এবড়োখেবড়ো, উঁচু। দু’ধারে আদিবাসী জনবসতি, শ্মশান আর ঝোপঝাড়। সেখানেই ছিল বিমল দাশগুপ্তদের গুপ্ত আখড়া। আনাগোনা লেগে থাকত তরুণ রক্তের। গোপনে চলত ভারত মাতার সন্তানদের দীক্ষা দেওয়া। সেসময়ই বাঁদিকে এক জায়গায় গড়ে তোলা হোল অস্থায়ী বেদী। ঘট প্রতিষ্ঠা করা হল দেবী মহামায়ার। শক্তির আধার কালিকার। যোগ দিলেন জনৈক চন্দনী দেবী। গোপনে চলতে থাকল দেবীর থানে অস্ত্র দীক্ষা। সশস্ত্র আন্দোলনে মেদিনীপুর তথা দেশ তোলপাড়। ইংরেজরা ভয় পেয়ে আরও হিংস্র হয়ে চলেছে। তবু রোখা যায়নি দেশমাতার দামাল সন্তানদের।
স্বাধীনতা (FREEDOM) এসেছে। ভারত মাতা শৃঙ্খলমুক্ত। বিমল দাশগুপ্ত তারপরেও নিয়ম করে এসেছেন এই স্থানে।
বিপ্লবের দীক্ষা যে বেদীতে সেই পুজো বন্ধ হতে পারে না। ১৯৬৮ সালে পূজার সমস্ত দায়ভার নিলেন বাড় মানিকপুরের নিতাই দাস। পেশায় জেলে। তখন থেকেই দক্ষিণাকালী প্রতিমা উপাসনার সূচনা। টানা ৩০ বছর সেই দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৮ সালে শিক্ষক পূর্ণেন্দু জানার উদ্যোগে মেদিনীপুর স্পোর্টস ক্লাব সেই দায়িত্ব নেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত। এখন বাপী দাসদের উদ্যোগে প্রতিবছর পূজিতা হন দেবী দক্ষিণাকালী। ইতিহাসের হাত ধরে বিপ্লবের বানী ছড়িয়ে পড়ে কাঁসর, ঘন্টা, শাঁখের আওয়াজে।
– নিসর্গ নির্যাস মাহাতো