নিজস্ব প্রতিনিধি: নেতাজি ছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ। আর ব্যক্তি সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন পরম ধার্মিক। জাতীয়দাবাদ, রাজনীতির সঙ্গে তিনি ধর্মকে গুলিয়ে ফেলা পছন্দ করতেন না। আজাদ হিন্দ বাহিনীর জন্য তখন ‘অনুদান’ প্রয়োজন। উদ্দেশ্য একটাই, দেশমাতাকে শৃঙ্খলামুক্ত করা। বাহিনীর জন্য অনুদান দিতে আসা বিশিষ্ট একজনকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘নেতাজি’ হিসেবে তিনি মন্দিরে যাবেন না।
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু (NETAJI SUBHAS CHANDRA BOSE) তখন সিঙ্গাপুরের ট্যাঙ্ক রোডে। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন গুজরাটি চেট্টিয়া ব্যবসায়ী ব্রিজলাল জয়সোয়াল। বললেন, আজাদ হিন্দ বাহিনীর জন্য অনুদান দিতে চায় মন্দির কর্তৃপক্ষ। কোন মন্দির? চেট্টিয়া মন্দির। ব্যবসায়ীর অনুরোধ ছিল, নেতাজি নিজে গিয়ে যদি সেই অর্থ নেন, তাহলে মন্দির কর্তৃপক্ষ সরাসরি তাঁর হাতে টাকা তুলে দিতে পারে। নেতাজি জানতেন ওই মন্দিরে সকল ধর্ম এবং সকল জাতের মানুষের প্রবেশের অধিকার নেই। ওই ব্যবসায়ীকে নেতাজি বললেন, ব্যক্তি সুভাষ হিসেবে তিনি মন্দিরে যেতে পারেন। তবে আজাদ হিন্দের সর্বাধিনায়ক হিসেবে তিনি কোনও বিশেষ ধর্মের উপাসনাগৃহে যেতে পারেন না। আর যেই কারণে মন্দিরে যাওয়া সেই কারণ যে আজাদ হিন্দ বাহিনী। তাই বাহিনীর সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনিও যাবেন ভারতীয় হিসেবে। সেদিন ফিরে গিয়েছিলেন ব্যবসায়ী।
আরও পড়ুন: ধর্ম এবং রাজনীতি গুলিয়ে ‘শরবত’, চূড়ান্ত অপছন্দ ছিল নেতাজির
পরের দিনই নেতাজি’র কাছে এসেছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকজন সদস্য। তাঁরা আমন্ত্রণ জানালেন নেতাজি সহ আজাদ হিন্দ বাহিনীর সকল সদস্যকে। বাহিনীতে সৈন্যরা ছিলেন শিখ, মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের। সকলে মন্দিরে গেলেন নির্দিষ্ট দিনে। মন্দিরের দরজা সেদিন সকল ধর্ম এবং সকল জাতির মানুষের জন্য খোলা। ‘রাজনৈতিক’ সেই সমাবেশে এগিয়ে এসে দেশকে স্বাধীন করার জন্য অর্থ নিলেন নেতাজি। বক্তব্য রাখলেন তিনি। জাতীয়তাবাদী ওই সমাবেশে সেদিন মন্দিরে কোনও ধর্মীয় স্লোগান ওঠেনি। দেশমাতাকে স্বাধীন করার স্বপ্ন নিয়ে সমবেত স্লোগান ছিল, দেশের স্লোগান- ‘জয় হিন্দ’।