এই মুহূর্তে




মুজিব হত্যার আগে ঢাকায় খুন করা হয়েছিল বাঙালি ‘RAW’ কর্তাকে! ৫০ বছর পর চাঞ্চল্যকর তথ্য




নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়া দিল্লি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি না থাকলে বাংলাদেশ নামক দেশটির সৃষ্টি হত না, একথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। ভারতের সাহায্যেই পূর্য পাকিস্তানের বাংলাদেশ হয়ে ওঠা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও স্বাধীন বাংলাদেশ জন্মগ্রহণের ৪ বছরের মধ্যেই খুন করা হয় তাঁকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম হয়। আর ১৯৭৪ সালে সে’দেশে ছিলেন ‘র’-এর এক বরিষ্ঠ আধকারিক। তিনি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নির্দেশ পেয়ে।

সেই বছরই খুন হন তিনি। আর তার পরের বছর প্রয়াত হন শেখ মুজিব। প্রবীণ সাংবাদিক মানস ঘোষ তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত ‘মুজিব’স ব্লান্ডারস: দ্য পাওয়ার অ্যান্ড দ্য প্লট বিহাইন্ড হিজ কিলিং’-উপন্যাসে দাবি করেছেন, শেখ মুজিবকে উৎখাতের অংশ হিসেবে ওই ‘র’ এজেন্টকে হয়তো হত্যা করা হয়েছিল। যদিও মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে হার্ট অ্যাটাক উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আজও সামনে আসেনি তাঁর ময়না তদন্তের রিপোর্ট। এমনকি ঘটনাটি ভারত বা বাংলাদেশ-কেউই কখনও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এই মৃত্যুর তদন্ত করেনি।

ইন্দিরা গান্ধি এক গোপন মিশনের জন্য ওই ‘র’ এজেন্টকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি মারা গেলেন বাংলাদেশেই। জুলাই মাসে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে নিজের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাঁকে। পরের বছর সপরিবারে হত্যা করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। মানস ঘোষ দাবি করেছেন ওই ভারতীয় গুপ্তচরের হত্যার সঙ্গে শেখ মুজিবের মৃত্যুর সরাসরি সংযোগ ছিল।

প্রবীন সাংবাদিক তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘ফণীন্দ্রনাথ ব্যানার্জির মৃত্যু ছিল রহস্যময়। তিনি নাথ বাবু নামে পরিচিত ছিলেন। কলকাতাভিত্তিক ‘র’ কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যু আমাদের জন্য পীড়াদায়ক ছিল। নাথবাবু প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি এবং শেখ মুজিবের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম ছিলেন।’ প্রসঙ্গত, ওই ‘র’ এজেন্টের নাম যে ফণীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ‘র’-এর কলকাতার এজেন্ট ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে ছিল তাঁর অত্যন্ত সুসম্পর্ক। তিনি পিএনবি বা নাথবাবু নামে পরিচিত ছিলেন।

নিজের বইতে মানস ঘোষ আরও লিখেছেন, ‘শেখ মুজিবের মতো ব্যক্তির সঙ্গে নাথবাবুর সম্পর্ক বজায় রাখা ছিল তাঁর পেশাদারিত্বের একটি সাফল্য। তবে ইন্দিরা গান্ধি শেখ মুজিবের সঙ্গে নাথবাবুর সম্পর্ককে পেশাদার ও ব্যক্তিগত উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তিনি ইন্দিরা গান্ধির কাছে সরাসরি রিপোর্ট করতেন এবং কোনও মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই তাঁর কাছ থেকে নির্দেশ পেতেন।’

উপন্যাসে একথা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক স্পষ্ট করেই লিখেছেন যে ফণীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুধু শেখ মুজিব নয়, তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবেরও খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। গোটা পরিবারের আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিলেন ‘র’-এর নাথবাবু।

মানস ঘোষ একথাও জানিয়েছেন যে ঢাকার কূটনীতিকদের মধ্যে নিজেকে অন্তরালে রাখলেও রাজনীতিবিদ তাজউদ্দিন আহমেদ এবং শেখ মুজিবের পরিবারের কাছে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন নাথবাবু। প্রায়ই যেতেন শেখ বাড়িতে। এই ঘন ঘন মুজিবের বাড়ি যাওয়া, সুসম্পর্ক তৈরি, এগুলোই হয়তো কাল হয়েছিল ফণীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনে।

‘মুজিব’স ব্লান্ডারস: দ্য পাওয়ার অ্যান্ড দ্য প্লট বিহাইন্ড হিজ কিলিং’র লেখকের দাবি শেখ মুজিবকে সরাতে গেলে আগে সরানো দরকার ছিল নাথবাবুকে। কারণ সেনাবাহিনীর তৎকালীন যে সব কর্মকর্তা শেখ মুজিবকে উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের ক্ষেত্রে হয়তো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন নাথবাবু।

সাংবাদিক ও লেখকের দাবি, ‘ওরা সম্ভবত ভেবেছিল নাথবাবু ওদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনে গিয়েছেন এবং মুজিব ও তাঁর পরিবারকে বাঁচানোর জন্য ভারত সরকার হয়তো তাঁকে নিয়োগ করেছে। ওরা ভেবে থাকতে পারে নাথবাবু ঢাকায় থাকলে হয়তো ওদের মিশন সফল করা সম্ভব হবে না।’

হোটেলে ফণীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রথম পৌঁছান রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছেন নাথবাবুর মৃত্যুর কারণ কারও সঙ্গে আলোচনা করা যাবে না। এমনকি বাংলাদেশের গোয়েন্দা আধিকারিকরাও এই সময় একদম নীরব ছিলেন। ফোনেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

লেখক এই সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন যে, ঢাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট নেতার সঙ্গে বৈঠকে খাবার খাওয়ার পর বিষক্রিয়ার কারণে ‘র’ আধিকারিক ফণীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই ভাবে কত দেশপ্রেমিক দেশের জন্য চলে যান। তাঁরা সবাই রণক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেন না। ইতিহাস সবাইকে জানে না, চেনে না। তবু এই মানুষগুলিই রয়ে যান ভারতের আত্মায়।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

‘মহারাষ্ট্র থেকে মুম্বইকে যে আলাদা করবে, তাকে টুকরো করে ফেলব’, হুঙ্কার উদ্ধবের

‘বাঁচতে চাইলে শেখ মুজিবের নাম মুখে আনবি না’, গোপালগঞ্জে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে শাঁসানি সেনা-পুলিশের

‘INDIA’ জোটের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে দিল কেজরিওয়ালের আপ, বিজেপির সঙ্গী হচ্ছে?

SSC মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ

‘জন্মদিনে দারুণ উপহার পেলাম’, আবগারি দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার ভূপেশ বাঘেলের ছেলে চৈতন্য

মোদির বঙ্গ সফরের দিনে নাড্ডার বাসভবনে দিলীপ ঘোষ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ