নিজস্ব প্রতিনিধি: সে এক অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। ২০২২ সালে কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের দলবলের কাছে নিহত হয়েছিলেন পঞ্জাবের রকস্টার গায়ক তথা কংগ্রেস নেতা সিধু মুসেওয়ালা। তাঁর মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েন তাঁর বাবা-মা। বাবা-মায়ের চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যুর চেয়ে খারাপ কিছু হতেই পারেনা। তবে ছেলের মৃত্যুর দুঃখ বোধহয় খুব তাড়াতাড়ি ঘুচতে চলেছে সিধু বাবা-মায়ের। কারণ নিহত গায়কের মা আবারও অন্তঃসত্ত্বা। শীঘ্রই তাঁদের পরিবারে নতুন সদস্য আসতে চলেছে। মুসওয়ালার মা চরণ কৌর গর্ভবতী এবং শীঘ্রই তিনি সন্তান প্রসব করবেন, বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নিহত গায়কের পারিবারিক সূত্র। আগামী কয়েক মাসেই সন্তানের জন্ম দেবেন চরণ কৌর। গায়ক রাজনীতিবিদ সিধুর মায়ের বয়স ৫৫ বাবার বয়স ৬০ বছর। গায়কের মৃত্যুর পরই ফের সন্তানের নেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন তাঁরা। শোনা যাচ্ছে, আইভিএফের সাহায্যেই গর্ভবতী হয়েছেন সিধুর মা।
যদিও সিধু হত্যার ক্ষত হয়তো কোনদিনও মিটবে না, কিন্তু তাঁর ভাই-বোনের জন্ম তাঁর বাবা-মাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাবে। মুসেওয়ালা ছিলেন তার পিতামাতার একমাত্র পুত্র। যদিও তাঁর বাবা-মা এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করেননি। ২৯ মে, ২০২২ সালে পঞ্জাবের মানসা জেলায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সিধুকে। তাঁর উপর প্রায় ৩০ রাউন্ড গুলি চালানো হয়। তাঁর মৃত্যুর কারণ ছিল আন্তঃদলীয় শত্রুতা। যেখানে উঠে এসেছিল কানাডার গোল্ডি ব্রার এবং লরেন্স বিষ্ণোইয়ের নাম। অবশেষে ২০২২ সালের ১ জুন তিহার জেলে বন্দি থাকা কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে, তাঁর দলবলই সিধুকে হত্যা করেছে। ঘটনার দিন জনপ্রিয় গায়ক SUV-গাড়িতে চেপে তাঁর খালার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। প্রকাশ্যে দিবালোকেই তাঁকে খুন করা হয়। জানা যায়, মৃত্যুর আগে তখন তাঁর বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু হতভাগ্য বাবা-মাকে ছেলের বউ দেখার বদলে দেখতে হল ছেলের মৃতদেহ।
১১ জুন ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন শুভদীপ সিং সিধু, পরে তাঁকে তাঁর গায়কী সত্ত্বা সিধু মুসেওয়ালা নাম দেয়। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ হিট গান ছিল ‘Scapegoat’। তিনি যেমন Rap-হিসেবে ব্যপক দক্ষ ছিলেন তেমনি তাঁর কন্ঠে রোমান্টিক গানও ব্যপক হিট হয়েছে। তাঁর একটি অ্যালবাম কানাডিয়ান হিট ১০০-এর চার্ট তালিকায় নাম লিখিয়েছিল, যা কিনা প্রথম ভারতীয় হিসেবে তাঁর নামটা উজ্জ্বল করেছিল। এছাড়াও তিনি ২০২২ সালে পাঞ্জাবে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও প্রায় ৬০,০০০ ভোটে তিনি হেরে যান। সেই বছরের ২৯ মে তাঁকে খুন করা হয়। জনসাধারণের মধ্যে এখনও ক্ষোভ রয়েছে, বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে। মুসেওয়ালা তার নিজের গান লিখে তা গাইতেন। তাকে ধনী পাঞ্জাবী গায়কের মধ্যে একজন হিসাবে বিবেচনা করা হত।
এমনকি তাকে হত্যার পরেও তার বেশ কয়েকটি গান প্রকাশিত হয়েছিল। সম্প্রতি শোনা গিয়েছে, মুসেওয়ালার বাবা বলকাউর সিং বাথিন্দা লোকসভা আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। তিনি অবশ্য বলেছিলেন, রাজনীতিতে এলেও তাঁর জীবনের কিছুই বদলাবে না। সম্প্রতি, চরণ কৌর তার সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলিতে ‘দিল্লি চলো’ প্রতিবাদে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারী কৃষকদের সমর্থন করেছিলেন এবং এমনকি খানউরি সীমান্তে নিহত কৃষক শুভকরন সিং-এর বিচার চেয়েছিলেন।