নিজস্ব প্রতিনিধি, বালুরঘাট: আর মাত্র হাতে গোনা ক’টা দিন। তারপরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। কিন্তু এবছর রয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে বাড়ছে আতঙ্ক। আর তাই চিকিৎসকরা অভিভাবকদের পরামর্শ দিচ্ছেন, এবছর বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে প্যান্ডেল হপিং থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু পুজোর প্যান্ডেলে যদি শিশুরাই না যায় তাহলে, আনন্দের ছবি ফুটে উঠবে কীভাবে? সাতপাঁচ না ভেবে বাড়িতেই সেই আনন্দ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন বালুরঘাটের রূপালি চক্রবর্তী। নাতনির আবদারে বাড়িতেই বানিয়ে ফেললেন দুর্গা প্রতিমা। তাও আবার কাপড়-সুতো দিয়ে। প্রতিমা যখন তৈরি তখন বাড়িতেই পুজোর আয়োজন করতে চলেছে চক্রবর্তী পরিবার।
বাড়ির চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন, ছোট মেয়েটিকে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে ঠাকুর দেখতে না যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাহলে কি এবছর আর ঠাকুর দেখা হবে না? এই প্রশ্নটাই ঠাকুমাকে করেছিল সে। সঙ্গে বায়নাও করেছিল, বাড়িতেই পুজোর আয়োজন করতে। পুজোর আয়োজন নয় করা যাবে, কিন্তু ঠাকুরের দাম তো আকাশছোঁয়া। শেষমেষ নাতনির আবদার বাড়িতেই ঠাকুর তৈরি করে ফেললেন ঠাকুমা।
তবে খড়-মাটি দিয়ে নয়। বাড়িতে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় কাপড়ের টুকরো আর সূচ-সুতো দিয়ে একে একে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতি, লক্ষী-সহ তাঁদের বাহন তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। দেবী দুর্গার পায়ের কাছে রয়েছে অসুরও। বাকি ছিল বেশভূষা-সাজসজ্জা। তাও বাজার থেকে কিনে এনে মাত্র ১৫ দিনেই রূপালি চক্রবর্তী গড়ে তুলেছেন দুর্গাপ্রতিমা। যা দেখতে পাড়াপড়শিরাও এখন থেকেই ভিড় জমাচ্ছেন।
যদিও এর আগে কখনও এরকম কোনও প্রতিমা তৈরির কাজ করেননি রূপালিদবী। তবে আর পাচজন গৃহীনির মতোই সূচ-সুতোয় হাতের সূক্ষ্ম কাজ ফুটিয়ে তুলেছেন অনেক কিছুতেই। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবছর আর মণ্ডপে ঠাকুর দেখতে যাওয়া হবে না। তাই এই কাপড়ের তৈরি প্রতিমাই বাড়িতে পুজো করা হবে চারদিন ধরে। তারপর ঘরের শোভা বাড়াতে তা সাজিয়ে রাখা হবে। তবে শিল্পী রূপালি চক্রবর্তী জানালেন, ‘পুজোর পর নাতনি এই দুর্গা-পুতুল নিয়ে খেলবে। ওর বায়নাতেই এই প্রথম আমি কাপড়-সুতো দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করলাম।’