এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

WEB Ad_Valentine



প্যারিস-জার্মানির ডাকের সাজে সেজে ওঠে দাঁ বাড়ির প্রতিমা



নিজস্ব প্রতিনিধি: বারোয়ারি পুজোয় দুর্গার মূর্তিতে সোনার গয়না পরানো বর্তমানে ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। একডালিয়া থেকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, গতবছরই তালিকায় নব সংযোজন হয়েছে শ্রীভূমি। তবে জানেন কী, কথিত আছে উমা মর্ত্যে এসে গয়না ও নানা ধরনের প্রসাধনীতে সাজগোজ করেন জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়িতেই। ১৮৪০ সালে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন শিবকৃষ্ণ দাঁ। সেই সময়ে তিনি ছিলেন শহর কলকাতার প্রবাদ-প্রতীম ব্যবসায়ী। শিবকৃষ্ণ নিজে খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় সোনার গয়না পরতে ভালবাসতেন। আর তাই মা দুর্গাকেও সোনার গয়নায় সাজিয়ে তুলতেন। সেই রেওয়াজ রয়েছে এখনও।

যাঁরা কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘কলকাতার বারোইয়ারী পূজা’ বইটি পড়েছেন, তাঁরা বেঁটে-খাঁটো শ্যামবর্ণের বীরকৃষ্ণ দাঁকে চেনেন। নোয়াপাতি রকমের ভুঁড়ি, হাতে সোনার তাগা, কোমরে মোটা সোনার গোট, গলায় এক ছড়া সোনার হার, আহ্নিকের সময় খেলবার তাসের মত চ্যাটালো তাসের কষ্টিকবচ পরে থাকেন। বইয়ের চরিত্র বীরকৃষ্ণই জোঁড়াসাকো দাঁ পরিবারের শিবকৃষ্ণ দাঁ।  পরিবারের আদি বসতি ছিল বর্ধমানের সাতগাছিয়ায়।  পরবর্তীতে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় চলে আসেন গোকুলচন্দ্র দাঁ। গোকুলচন্দ্রের দত্তক পুত্র ছিলেন শিবকৃষ্ণ দাঁ। গন্ধক দ্রব্য, লোহা, কাঠ-কয়লা প্রভৃতি ব্যবসায় সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি। সেই সময়ে আসানসোল এলাকায় বেশ কিছু কোলিয়ারি কিনেছিলেন। সেখানে রেললাইন তৈরির বরাতও পেয়েছিলেন তিনিই।

ব্যবসায় লাভের টাকার একটা বড় অংশ শিবকৃষ্ণ দুর্গাপুজোয় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই সময় দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তোলার জন্য ইউরোপ থেকে আনা হত সোনার গয়না। প্রতিমার ডাকের সাজ প্যারিস আর জার্মানি থেকে বানিয়ে আনতেন শিবকৃষ্ণ দাঁ। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত বিদেশ থেকে ডাকের সাজ আনার এই রীতি অব্যাহত ছিল। সেই ডাকের সাজের কিছু ধাতব কলকা এখনও চালচিত্রে ব্যবহার করা হয়। তামা আর পিতলের সংমিশ্রণে তৈরি এই ধাতব কলকা এখনও সাদা জলে সামান্য ধুয়ে নিলেই একেবারে নতুন ধাতুর মতোই চকচক করে। দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতী সেজে ওঠেন সোনার জরির কাজ করা বেনারসি শাড়িতে। কার্তিক ও গণেশ পরেন নীল জোড়বস্ত্র। সিংহের পিঠবস্ত্র, মহিষাসুরের বস্ত্রে ও কার্তিকের টোকাতে থাকে সোনার জরির কাজ। সপ্তমীর দিন রুপোর ছাতা মাথায় দিয়ে নবপত্রিকা গঙ্গাস্নানে যায়। সমস্তটাই নিজের পছন্দমতো বিদেশ থেকে বানিয়ে এনেছিলেন শিবকৃষ্ণ দাঁ, যা এখনও অক্ষত রয়েছে।

শাস্ত্রীয় বিধি এখনও কঠোরভাবে মানা হয় জোড়াসাঁকোর দাঁ বাড়িতে। রথের দিন গড়ানকাঠ পুজোর মধ্য দিয়ে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। জন্মাষ্টমীতেই কাঠামোতে দেবীর মস্তক স্থাপন করা হয়। পটুয়ারা তৈরি করেন দেবীর চালচিত্র। দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় তেরোটি শাড়ি ও তেরোটি কাঁসার পাত্র দেওয়া হয়। এই বাড়িতে সম্পূর্ণ বৈষ্ণবমতে পুজো হয়, তাই বলির প্রথা নেই। সিংহের মুখ ঘোটকাকৃতি নয়, তবে শ্বেতবর্ণ। পুজোর বোধন হয় ষষ্ঠীর দিন। এই বাড়িতে অন্নভোগের প্রচলন নেই। এখানে দেবীকে নানা রকমের মিষ্টান্ন যেমন, গজা, খাজা, পানতুয়া, মিহিদানা, নাড়ু, মুড়কি, খই ইত্যাদি ও লুচিভোগ নিবেদন করা হয়। সবটা বানানো হয় বাড়িতেই। সন্ধিপুজোর সময় দেবীকে নিবেদন করা হয় এক মণ চালের নৈবেদ্য, যা বাড়ির পুরুষ সদস্যরা সাজান। সন্ধিপুজোয় মাকে ১০৮টি প্রদীপ ও ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করা হয়। আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, সন্ধিপুজার সময় গর্জে ওঠে কামান। প্রায় ১৭ ইঞ্চি লম্বা কামানটি তৈরি করেছিল ‘উইনচেস্টার রিপিটিং আর্মস কোম্পানি’।

শিবকৃষ্ণের আমলে দাঁ বাড়ির পুজোর সঙ্গে চরম রেষারেষি ছিল প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পুজোর। সেই সময়ে দাঁ বাড়ি থেকে বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে বেরিয়ে চিৎপুরের দিকে যেতে হলে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর পথ ছিল না। এই বিষয়ে দশমীর দিনের একটি মজার গল্প প্রচলিত আছে। প্রতিমা বিসর্জনের সময় ৪০ জন বাহক দেবীকে কাঁধে করে বিসর্জন দিতে যেতেন। বাহকদের প্রতি নির্দেশ ছিল, তাঁরা যেন ঠাকুরবাড়ির সামনে দেবীকে বেশ কয়েকবার ঘুরিয়ে ঢাক-ঢোল বাজানোর। এরফলে ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের মনে ঈর্ষা জাগানো হত। পরে ঠাকুরবাড়িতে দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে যায়। সেই রেষারেষিও আর নেই। এখন আর দেবীকে বাহকেরা নিয়ে যান না। লরি যায় গঙ্গার ঘাটে।



Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

রায় জমিদার বাড়িতে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়

পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলের ‘দে’ বাড়িতে দেবী দশভুজা নন,মহিষাসুরও নেই

বাংলা ছাঁচের মুখ, সোনার গয়না, রূপোর অস্ত্র, দেবী শোভিত বদনের গৃহে

সন্ধি পুজো হয় না, নেই সিঁদুর খেলাও, ঘোষ বাড়ির পুজো বেশ ব্যতিক্রমী

মানত পূরণ হলেই মাকে বুক চিরে রক্ত দেন বাড়ির মেয়েরা

শাক্ত, বৈষ্ণব ও শৈব মতের মিলনে পুজো হয় ছাতুবাবু-লাটুবাবুর বাড়িতে

Advertisement

এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর