নিজস্ব প্রতিনিধি: আজকের গুগল খুলেছেন। আজ গুগল কিন্তু সেজেছে অন্য ধাঁচে। আসলে প্রতিদিনই দেশে কোনও না কোনও উৎসব বা কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের জন্মদিন খুব যত্ন সহকারে পালিত হচ্ছে দেশ-বিদেশ। আর সবটাই প্রতিফলন ঘটে টেক-জায়ান্ট সার্চিং ইঞ্জিন গুগলে। তেমনি এদিন যে প্রতিমূর্তি গুগলের ভাসছে, জানেন কি তিনি কে? তিনিও দেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। না বলিউড নয়, তিনি হলেন দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রথম মহিলা লিড চরিত্রের অভিনেত্রী পিকে রোজি। তিনি হলেন প্রথম মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির অভিনেত্রী। আজ এই অভিনেত্রীর ১২০তম জন্মবার্ষিকী। তাই গুগল ডুডল প্রয়াত অভিনেত্রীকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানাল এই সম্মানিত কৌশলে। তিরুবনন্তপুরমের রাজম্মায়, ১৯০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পিকে রোজি।
বর্তমানে সেই এলাকার নাম ত্রিবান্দ্রাম। শুক্রবার গুগলের তরফ থেকে জানানো হল, ‘আজকের ডুডল পিকে রোজি কে সম্মান জানাচ্ছে, যিনি মালায়ালাম সিনেমার প্রথম নায়িকা ছিলেন’। শুধু তাই নয়, গুগল আইকনের প্রশংসা করে বলেছে, ‘এক যুগে যখন পারফর্মিং আর্টস সমাজের অনেক অংশে নিরুৎসাহিত ছিল, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে, তখন রোজিই মালয়ালাম চলচ্চিত্র বিগাথাকুমারন (দ্য লস্ট চাইল্ড)-এ প্রথম অভিনয়ের মাধ্যমে সমাজের সব বাধাগুলি ভেঙে দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জীবদ্দশায় তাঁর কাজের জন্য কোনও স্বীকৃতি পাননি, তাই আজকের যুগে রোজির গল্পগুলি মিডিয়াতে তুলে ধরা খুবই প্রাসঙ্গিক। তাঁকে চেনানো খুবই দরকার। আজ তাঁর জীবনের গল্প অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা’।
পিকে রোজির পরিচয়…..
পিকে রোজি ছিলেন মালয়ালম সিনেমার প্রথম মহিলা চরিত্রের অভিনেত্রী। দলিত হওয়ার কারণে সেসময় নানা বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন তিনি। জেসি ড্যানিয়েল পরিচালিত বিগাথাকুমারন (দ্য লস্ট চাইল্ড)-ছবির মাধ্যমে মালায়ালাম ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকা হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ তাঁর। তিনি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার প্রথম দলিত অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য প্রচুর সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। পাশাপাশি দলিত খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণেও প্রচুর কঠিন লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। ব্যক্তিগত জীবনে, অভিনেত্রীর বাবা-মা ছিলেন দিনমজুর। বাবাকে সাহায্য করার জন্যে একসময় ঘাস কাটার কাজও করেছিলেন তিনি। পিকে রোজির উপর ভিত্তি করে, কুনাল রায় লেম ইউনিভার্সিটি একজন সাংস্কৃতিক সমালোচক তথা লেখক ভিনু আব্রাহামের ‘দ্য লস্ট হিরোইন’-এর পর্যালোচনায় লিখেছিলেন।
রায়ের লেখা বইটিতে উল্লেখ রয়েছে, কক্করিসি নাটকে একজন প্রসিদ্ধ অভিনেত্রী ছিলেন তিনা। যেটি কেরালার এক ধরনের লোকনাট্য। যা তামিল এবং মালয়ালাম উভয়ের মিশেলে তৈরি। ডেবিউ ছবিতে কাজ করার পর নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি, সঙ্গে উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে গিয়ে অভিনেত্রীকে পাথর বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন। অভিনেত্রীর কুঁড়েঘরটি পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে, রোজিকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। কারণ সেই সময়কালে অভিনয়ের সঙ্গে পতিতাবৃত্তকে সমতুল্য মনে করা হত সমাজে। বেশ কয়েকটি গোঁড়া হিন্দুদের কাছ থেকে প্রচুর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিলেন রোজি। তাঁর অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ছাড়িয়ে গিয়েছিল সমাজ অবজ্ঞা মনোভাব। অনেকেই দাবি করেন, “রোজি”র পরিবার খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। অভিনেত্রীর নাম রাজম্মা থেকে রোসাম্মা হয়েছাল। যদিও অন্যরা দাবি করেন যে ড্যানিয়েলই তাঁকে আরও ‘গ্লামারাস’ নাম দিয়েছিলেন। তাঁর মা হিন্দু ছিলেন। যদিও রোজির সিনেমা ‘বিগাথাকুমারন’-এর কোনও কপি খুঁজে পাওয়া যায়নি।