নিজস্ব প্রতিনিধি: গত ১ ডিসেম্বর OTT প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছিল দক্ষিণী সুপারস্টার অভিনেত্রী নয়ন তারার ‘অন্নপুরাণি’। ছবিটি একজন শেফ-এর জীবন কাহিনী ব্যক্ত করে। ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নয়নতারা। কীভাবে একজন হিন্দু পুরোহিতের মেয়ে হয়ে বিশ্বের সেরা রাধুনি হয়ে উঠলেন অভিনেত্রী, সেটাই ছবির মূল উপজীব্য। পরিচালক নীলেশ কৃষ্ণার এই ছবির হাত ধরেই ওটিটিতে ডেবিউ করলেন জওয়ান অভিনেত্রী। কিন্তু ছবিতে কয়েকটি বিতর্কিত দৃশ্য নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। যা হিন্দু ধর্মের অনুভূতিতে রীতিমতো আঘাত হেনেছে। ছবির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার ফলে নেটফ্লিক্স থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ছবি।

ছবিতে দেখানো হয়েছে, হিন্দু পুরোহিতের মেয়ে হয়ে রাধুনি হওয়ার জন্যে মাংস কাটছে অন্নপুরাণি, এছাড়াও মাংস কাটলে তাঁর ব্যাভিচার হবে না অভিনেত্রীর দ্বারা, সেটাও যুক্তি দিয়ে অন্নপুরাণিকে বুঝিয়েছে তাঁর বন্ধু ফারহান। যিনি কিনা জাতে মুসলিম। তিনি বলেছেন, নির্বাসনে থাকাকালীন রাম-সীতা জঙ্গলে প্রাণীদের হত্যা করে মাংস খেয়েছে। এছাড়াও নামাজ পড়ার পরে বিরিয়ানি রাঁধলে তার স্বাদ দ্বিগুণ বেড়ে যায়, এমন একাধিক বিতর্কিত দৃশ্য নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। রামকে অপমান করার অভিযোগের পাশাপাশি উঠেছে লাভ জিহাদের প্রসঙ্গও। বৃহস্পতিবার দুটি ডানপন্থী সংগঠনের কর্মীরা একাধিক অভিযোগ নিয়ে নয়নতারা, এবং ছবির পরিচালক-প্রযোজকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। দিন দুয়েক আগে পশ্চিম শহরতলির ওশিওয়ারা থানায় বজরং দলের কর্মীরা একটি অভিযোগে দায়ের করেছিলেন এই ছবির বিরুদ্ধে। তারপরেই এই বিষয় নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তদন্ত।

এছাড়াও হিন্দি আইটি সেলের প্রতিষ্ঠাতা রমেশ সোলাঙ্কিও দক্ষিণ মুম্বইয়ের লোকমান্য তিলক মার্গ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ছবিতে শ্রীরামকে হেয় করে একাধিক সংলাপ রয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে। ছবিটির শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়েছে যে, হিন্দু পুরোহিতের মেয়ে অন্নপুরাণি নয়নতারা হিজাব পরে নামাজ পড়ছেন। এই সকল দৃশ্যের জন্যে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এখন পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছেন অভিযোগকারীরা। লাভ জিহাদ হল, হিন্দু নারীদের ইসলামে স্থানান্তর করার জন্যে মুসলিম পুরুষদের সমন্বিত প্রচেষ্টার অভিযোগ। যেটি গতবছর দ্য কেরালা স্টোরি-র মুক্তির পর বেশি সোচ্চার হয়েছিল। এবং দেশ জুড়ে রীতিমতো দাবানলের সৃষ্টি হয়েছিল।

ছবির বিতর্কিত দৃশ্যগুলি হল….

১. ছবির শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়েছিল, প্রতিযোগিতায় বিরিয়ানি বানানোর আগে মন্দিরের পুরোহিতের মেয়ে অর্থাৎ অন্নপুরাণি হিজাব পরে নামাজ পড়ে তারপর বিরিয়ানি রান্না করেছেন।

২. অভিনেতার বন্ধু ফারহান হিন্দু পুরোহিতের মেয়ে অন্নপূর্ণির মগজ ধোলাই করে তাঁকে মাংস কাটতে উৎসাহিত করেন, এবং যুক্ত দেখান যে, ভগবান শ্রী রাম এবং মাতা সীতাও মাংস খেয়েছিলেন।

৩. ছবিতে মন্দিরে না গিয়ে রমজানে ইফতার করতে ফারহানের বাড়িতে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। ছবিতে অন্নপুরাণির বাবা সন্ধ্যা আরতি করছেন এবং দাদি জপমালা জপ করছেন কিন্তু তার মেয়ে মাংস খাচ্ছে।

৪. অভিনেত্রীর চরিত্রের বাবা একটি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তিনি সাত প্রজন্ম ধরে ভগবান বিষ্ণুকে নৈবেদ্য দিয়ে আসছেন, কিন্তু তাঁর মেয়ে মুরগির মাংস প্রস্তুত করছেন।

৫. হিন্দু পুরোহিতের মেয়ে একটি মুসলিম ছেলের প্রেমে পড়ে, যাকে রমজানে ইফতার করতে যেতে দেখানো হয়েছে। হিন্দু মেয়েকে নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হচ্ছে এটাও দেখানো হয়েছে।

৬. ছবিতে ফারহান নামে একজন শিল্পী বলেছেন যে ভগবান শ্রী রাম, মা সীতা এবং ভগবান লক্ষ্মণ, শিব এবং ভগবান মুরুগানও প্রাণীদের হত্যা করে মাংস খেতেন।

৭. ছবিতে, ফারহান ভগবান শ্রী রামের নির্বাসনের সময় বনের প্রাণীদের হত্যা, তাদের কাটা, তাদের রান্না এবং খাওয়ার কথা বলেছেন।

৮. ফিল্মটিতে একটি ব্রাহ্মণ হিন্দু মেয়েকে মুসলিম ধর্মে প্ররোচিত করা এবং হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করে ঈশ্বরের অবমাননা দেখানো হয়েছে।