নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারী ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে একটি বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার হয়, বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাহিমা আক্তার শিমু ওরফে রাইমা ইসলাম শিমুর মৃতদেহ। প্রথমে অজ্ঞাত ব্যক্তি হিসেবেই নায়িকার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কারণ উদ্ধারের প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর ওইদিন রাতেই ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে অভিনেত্রীর নাম ও পরিচয় শনাক্ত করেছিলেন পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন টিম। ভয়াবহ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসা মাত্রই পরের দিন অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারী বাংলাদেশের কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় অভিনেত্রীর স্বামী সাখাওয়াত আলি নোবেল ও তাঁর বাল্যকালের বন্ধু ফরহাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন অভিনেত্রীর ভাই হারুনুর রশিদ।
এই ঘৃণ্য ঘটনার তদন্ত শুরু হওয়ার পরেই এই ঘটনায় অভিযুক্ত অভিনেত্রীর স্বামী সহ বেশকিছু অজ্ঞাত আসামীর খোঁজ মেলে। তাদের গ্রেফতার করার পরে অভিনেত্রীর স্বামী নিজেই স্বীকার করেন যে, তিনিই তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছেন এবং খুন করে অভিনেত্রীর লাশ লুকিয়ে ফেলেছেন। এই ঘটনার প্রায় ১১ মাস পরে অভিনেত্রীর স্বামী নোবেল ও এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। অভিনেত্রীর ভাইয়ের করা মামলার ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ২৯ নভেম্বর অর্থাৎ মঙ্গলবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম অভিনেত্রীর স্বামী এবং তাঁর বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। গত ২০ জানুয়ারি আদালতে ওই দুই আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে আটক। শিমুকে হত্যার কারণ হিসেবে পুলিশ সুপার বলেছিলেন, দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ থাকায় অভিনেত্রীর স্বামী তাঁকে হত্যা করেছে, সেটাই জানিয়েছেন নোবেল। হত্যার পর তাঁর লাশ গুম করার জন্যে বন্ধু ফরহাদের সহযোগিতা নিয়েছিলেন নোবেল। এমনকী তাঁদের কাছ থেকে একটি ‘রক্তমাখা প্রাইভেটকার’ ও উদ্ধার করা হয়েছিল। শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের পরে তাঁর মরদেহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন শিমু। ঘটনার দিন অভিনেত্রীর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। সেই কারণেই শিমুর পরিবারের সদস্য লোকাল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। ১৯৯৮ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত বর্তমান সিনেমা দিয়ে শিমুর রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন শিমু। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সহযোগী সদস্য ছিলেন।