নিজস্ব প্রতিনিধিঃ তিনি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার কিন্তু বাংলার দর্শককুলের কাছে তিনি রবি ঘোষ। বাংলা সিনেমার এক কিংবদন্তি অভিনেতা। যার আজ ৯০ তম জন্মদিন। গোটা আপামর দর্শক তাঁকে দেখেছেন বেশিরভাগই হাস্যরসাত্মক অভিনেতা হিসাবে। কিন্তু তাছাড়াও মঞ্চ ও ছোটপর্দায় তিনি সমান ভাবে কাজ করেছিলেন।
যে অভিনয়ের জন্য আজকাল সুঠাম চেহারার প্রয়োজন হয় সে চেহারার অধিকারি তিনি একেবারেই ছিলেন না। বেঁটেখাটো চেহারার শ্যামলা গায়ের রঙে ছেলেটি হয়ে উঠলেন এক সময় সকলের মনের মত অভিনেতা। তবে হ্যাঁ এমন চেহারা নিয়ে অভিনয়ে আসতে যখন তিনি চেয়েছেন তখন বাবা জীতেন্দ্রনাথ ঘোষ নাকি বলেছিলেন ‘অমন চেহারায় অভিনয় করতে গেলে চাকর বাকরের চরিত্র ছাড়া আর কিছু জুটবে না’। কিন্তু ভেঙে পড়েননি রবি ঘোষ। উল্টে জেদ চেপে গেল তাঁর।
শুধু তাই নয় এর পাশিপাশি চলল তাঁর নিজেকে ফিট রাখার জন্য শরীরচর্চা। ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে।এরপরেই আসে বড়পর্দায় কাজ করার সুযোগ। আসে বড় ব্রেক। উৎপল দত্ত থেকে সত্যজিত রায়, তপন সিনহা প্রত্যেকের সঙ্গে আলাপ থেকে কাজের সুযোগ সমৃদ্ধ করে তোলে রবি ঘোষকে।
ক্যারিয়ারের শুরু তপন সিনহার ছবি ‘আহ্বান’-র একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় দিয়ে। এরপর তপন সিনহার ‘গল্প হলেও সত্যি’তে আর একবার কাজের সুযোগ পান রবি ঘোষ। মজা ও কৌতূক ভরপুর এই ছবিতে এক র্বতাবহনকারী হিসাবে যেন দেখা গিয়েছিল তাঁকে। পরিবারের সবার দায়িত্ব একার ঘাড়ে তুলে নিয়ে ছবির শেষে তিনি যেন এক মেসেজ দিয়ে গিয়েছিলেন সকলকে। পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর।
এরপরই আসে সেই অনবদ্য সুযোগ। সত্যজিত রায়ের ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’ ছবিতে বাঘার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। যা তাঁর অভিনয় জীবন তো বটেই তার সঙ্গে বাংলা ছবির ক্ষেত্রে এক মাইলস্টোন হয়ে রয়েছে। যা দেখে এখনকার প্রজন্মও একি রকম আনন্দ পায়। এরপর একে একে ‘অরণ্যের দিন রাত্রি’, ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, ‘গুপি বাঘা ফিরে এলো’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘চারমূর্তি’ এরকম বহু অসাধারন ছবি দর্শককে উপহার দিয়ে গিয়েছেন তিনি। পেয়েছিলেন আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড ও কলাকার অ্যাওয়ার্ড
শুধু অভিনয় নয় পাশাপাশি পরিচালনাতেও হাত পাকিয়েছিলেন রবি ঘোষ। ১৯৭৪ ও ১৯৭৬ সালে ‘নিধিরাম সর্দার’ ও সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা’ নামে দুটি বাংলা সিনেমা পরিচালনা করেছিলেন তিনি। চরিত্রাভিনেতার কনসেপ্টে বিশ্বাসী সর্বকালের সেরা অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনকে আজন্ম গুরু বলে মেনে এসেছিলেন রবি। একবার সার্কাস দলেও দাক পেয়েছিলেন রবি ঘোষ। ভাগ্যিস যাননি, তাই বাংলা সিনেমা পেয়েছিল এক অসাধারণ কৌতূকাভিনেতাকে।