নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতাঃ ২০২০ সালে করোনা মহামারির (Pamndemic) জেরে বিশ্বজুড়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল জনজীবন। তার রেশ এসে পড়েছিল বাংলা ছবির জগতেও। সিনেমা হল গুলি বন্ধ থাকার কারণে আটকে গিয়েছিল একাধিক ছবির মুক্তির কাজ। ফলে অভিনেতা অভিনেত্রীরা ছাড়াও সিনেমা জগতের সঙ্গে যুক্ত টেকনিশিয়ান থেকে পরিচালক প্রযোজক এমনকি হল মালিকরা সকলেই অথৈ জলে পড়েছিলেন। কিন্তু মহামারির সেই ভয়াবহ দিনগুলো কাটিয়ে উঠে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে মানুষ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুলেছে সিনেমা হলগুলিও। মুক্তি পেয়েছে একের পর এক ছবি। কিন্তু কতটা সফল হয়েছে সেই সকল ছবি? মহামারি পরবর্তীতে টলিউডের (Tollywood) কী অবস্থা?
টলিউডের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের পুজোয় ‘গোলন্দাজ’ ছবির মুক্তির পর থেকেই শুরু হয়েছিল মহামারি পরবর্তী বাংলা ছবির সাফল্যর দৌড়। ছবিটি হলে বেশ ভালই চলে ছিল। এর পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় দেব অভিনীত ‘কিশমিশ’, এবং ‘টনিক’ এই ছবি দুটিও বক্স অফিসে ভালো ব্যাবসা করে। মোটামুটি ভালো আয় করে জিতের ‘রাবণ’ ছবিটিও। এরপর ২০২২ সালের সুরু থেকেই মুক্তি পায় একাধিক বাংলা ছবি যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনীক দত্ত পরিচালিত ‘অপরাজিত’, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘বেলাশুরু’ মুক্তি পায় ধ্রুব বন্দোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কর্ণসুবর্ণর গুপ্তধন’, পথিকৃৎ বসু পরিচালিত ‘কাছের মানুষ’, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘লক্ষ্মী ছেলে’ প্রভৃতি। এই সব ছবি গুলির মধ্যে ‘অপরাজিত’, ‘বেলাশুরু’ এবং ‘কর্ণসুবর্ণর গুপ্তধন’ তিনটি ছবিই বক্স অফিসে ব্লক ব্লাস্টার হয়। যা দেখে বিশেষজ্ঞদের মত মহামারি পরবর্তী খারাপ সময় অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে টলিউড।
টলিউডের নামী প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ-এর অধিকর্তা এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকান্ত মোহতার মতে যদি ছবির বিষয়বস্তু ঠিকঠাক হয় তাহলে দর্শক সেই ছবি দেখবেই। একটি বেসরকারি সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, ‘‘নতুন ছবির ব্যাপারে এবং বিশেষ করে যে সব ছবির একটা ঐতিহ্য আছে, সে সব ছবি নিয়ে দর্শক অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যদি ঠিকঠাক জিনিস তৈরি করে দর্শককে দেওয়া যায়, তা হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবেই। কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন ছবিটি সেতা প্রমান করে দিয়েছে। এখনও বক্স অফিসের নিরিখে এটিই সবচেয়ে বড় বাংলা ছবি এ বছরে’’।
শ্রীকান্ত মোহতার এই মতকেই যেন সমর্থন করলেন প্রযোজক পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। বেসরকারি সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, “বিগত কয়েক বছরের গ্রাফ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই বছরটা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে সেরা বছর। কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে বছরে যদি চারটে ব্লকবাস্টার হয় তা হলেই যথেষ্ট। সেই প্রেক্ষিতে এই বছরে ইতিমধ্যেই বাংলায় ‘অপরাজিত’, ‘বেলাশুরু’ এবং ‘কর্ণসুবর্ণর গুপ্তধন’ তিনটে ছবি ব্লকবাস্টার হয়ে গিয়েছে”।
ছবি ভালো ব্যাবসা করায় খুশি টেকনিশিয়ানদরাও। টলিউডের নামী মেকআপ শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু, ‘অপরাজিত’ ছবিতে কলাকুশলীদের মেকআপের দায়িত্বে ছিলেন। করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলা ছবির বাজার সম্পর্কে বেসরকারি সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, “মহামারির পর পরিস্থিতি অনেক ভাল হয়েছে। এখন আমার হাতে অনেক কাজ। ছবি তৈরি হচ্ছে, হল খুলে গিয়েছে, তাই আমাদের হাতে কাজও আসছে।”।
বাংলা ছবি ঘুড়ে দাঁড়ানোয় খুশি হল মালিক থেকে ডিস্ট্রিবিউটর সকলেই। দক্ষিন কলকাতার এক হল মালিক জানিয়েছেন, “আমাদের যখন ৫০ শতাংশ বা ৭৫ শতাংশ সিটের অনুমোদন ছিল, তখনও হলে দর্শক আসতেন তার পর যখন সেটা ১০০ শতাংশ হল, তখন তো হাউসফুল ছিল। তার মানে এটাই স্পষ্ট হচ্ছে যে, ছবি ভাল হলে দর্শক আসবেনই”। হল মালিকদের কথাকেই সমর্থন জানাচ্ছেন ছবির ডিস্ট্রিবিউটররাও। তাদের মতে দর্শক এখন অনেক সচেতন এবং স্মার্ট। বড় পর্দায় কোন ছবি ভালো হয়েছে আর কোন ছবি খারাপ, সেই খবর তাঁদের কাছে থাকে। তাই মহামারি কাটিয়ে বাংলা সিনেমা এই বছর ভালই ব্যবসা করেছে।