নিজস্ব প্রতিনিধি, কাবুল: দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের মেয়ে হওয়ার অপরাধে পড়াশোনা শিঁকেয় উঠেছে। গত বুধবার দীর্ঘ সাত মাস বাদে মেয়েদের স্কুল খুলে দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ডিগবাজি খেয়ে তালিবান নেতৃত্ব জানিয়ে দেয়, মেয়েদের পড়াশোনা চলবে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক অসংখ্য আফগান মেয়ে। শনিবার তালিবানি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্কুল খুলে দেওয়ার দাবিতে পথে নামলেন তারা। কাবুলের সিটি স্কয়ারে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের হাতে যেমন স্কুলের বই ছিল, তেমনই ছিল প্ল্যাকার্ড। কোনও প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘স্কুল খুলে দাও! ন্যায়বিচার করো’, আবার কোনও প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘আমরা পড়াশোনার অধিকার চাই।’ তালিবানদের মতো কট্টর মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে এমন বিক্ষোভ দেখানোর ঘটনা যে বেনজির, তা নিয়ে সংশয় নেই।
গত বছরের অগস্টে কাবুলে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে। আশরাফ গনি সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করে কাবুলিওয়ালার দেশে ক্ষমতার কুর্সিতে বসে তালিবানরা। প্রথম তালিবান জমানায় আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল। ফলে এবারেও নারী শিক্ষার পক্ষে কোপ পড়তে পারে বলে বহু পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের আশঙ্কা ছিল। তালিবানদের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, নারী শিক্ষায় বাধা দেওয়া হবে না। গত অক্টোবরে মেয়েদের জন্য প্রাথমিক স্কুলের দরজা খুলে দেওয়া হয়। গত বুধবার দেশে মেয়েদের জন্য মাধ্যমিকস্তরের স্কুল খুলেও দেওয়া হয়। ফলে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলেন পড়ুয়া ও অভিভাবকরা। কিন্তু কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বদলে গেল পুরো চিত্র। ফের ফতোয়া জারি হয়, মাধ্যমিকস্তরের বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।
আচমকাই কেন তালিবানদের মেয়েদের জন্য স্কুল চালুর সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে এল, তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এদিন যেভাবে ফের স্কুল খোলার দাবি জানিয়ে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পড়ুয়া ও অভিভাবকরা, তা তালিবানদের পক্ষে যথেষ্টই অশনিসঙ্কেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বিক্ষোভের খবর জানতে পেরেই যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে সিটি স্কোয়ারে ছুটে এসেছিল তালিবান যোদ্ধারা। তাদের রুদ্রমূর্তি দেখে বিক্ষোভকারীরা অবশ্য দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যায়।