নিজস্ব প্রতিনিধিঃ জীবনের অপর নাম সংগ্রাম। লড়াই করেই বেঁচে থাকতে হয় মানুষকে। বর্তমান যুগে মানুষ প্রযুক্তির উন্নতির কারণে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। প্রযুক্তির উন্নতির তালিকায় জাপান অন্যতম। তবে দিনরাত এক করে প্রতিষ্ঠানকে পরিষেবা দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে বহু কর্মচারী। তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি কি পর্যায়ে রয়েছে সে খবর কেউ রাখেনা। ফলে অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলেছে জাপানে। তেমনই এক ঘটনা আবারও সামনে এসেছে।
অতিরিক্ত কাজের চাপে আত্মহত্যা করেছেন এক ২৬ বছর বয়সী চিকিৎসক। গত বছরের মে মাসে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। জাপানের কোবে শহরের কোনান মেডিকেল সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক ছিলেন তিনি। এক মাসে টানা ২০০ ঘণ্টারও বেশি ওভারটাইম করেন তিনি। মৃত্যুর এক মাস আগে মৃত চিকিৎসক তাকাশিমা শিংগোকে ২০৭ বেশি কাজ করতে হয়। এমনকি আগের তিন মাসে একবারও ডে-অফ নেননি তিনি। গত জুন মাসে জাপানের শ্রম বিষয়ক নজরদারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অথচ কোনান মেডিক্যাল সেন্টার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চিকিৎসক তাকাশিমার মা জুঙ্কো তাকাশিমা সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁর ছেলেকে কর্মক্ষেত্রে কেউই সহায়তা করতেননা। তাঁর ছেলে জানিয়েছিলেন তাঁর কষ্টটা কেউ দেখেনা। আত্মহত্যার আগে কর্মক্ষেত্রে কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল আমার ছেলেকে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে একজন ভালো চিকিৎসক হতে চেয়েছিল। সে আর তা হতে পারবে না। আর কোনও দিন রোগীদের জীবন বাঁচাতে, সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে না। আমি চাই না, আর কারও বুক খালি হোক। আশা করছি, জাপানে চিকিৎসকদের জন্য কাজের পরিবেশ উন্নত করা হবে, যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।’
জাপানে এই ঘটনা নতুন নয়। ১৯৭০-এর দশক থেকেই অতিরিক্ত কাজের সংস্কৃতি সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলা করছে জাপান। অতিরিক্ত কাজের চাপে বিষাদ এবং তা থেকেই মৃত্যু হয়। এই ধরনের মৃত্যুর জন্য জাপানে আলাদা একটি নাম প্রচলিত আছে, সেটি হচ্ছে ‘কারোশি’। এর বাংলা অর্থ ‘বেশি কাজের চাপে মৃত্যু’। সরকারিভাবেই কারোশিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১৭ সালে ২৩৬ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়।