নিজস্ব প্রতিনিধি: লালপার্টির সবাই যষ্ঠীমধু ধোয়া তুলসি পাতা। তাঁরা চুরি করতেই জানেন না। সব সময় তাই পক্ক কেশ আর শ্বেত বেশ। গায়ে লাগে না কোনও কাদা। এবার তাঁদেরই কীর্তি চলে এসেছে সামনে। পুরো ১০০ কোটির ঘোটালা(100 Crores Scam)। বামফ্রন্ট সরকারের(Leftfront Government) আমলের বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনিয়মের ঘটনা চলে এসেছে সামনে। সেই অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের সরকারি সংস্থা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম বা ECSC-তে। সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভায় পেশ হয় এই সংস্থার ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষের বার্ষিক রিপোর্ট। তাতেই বাম আমলের এই অনিয়ম সামনে আসে। রিপোর্ট অনুযায়ী, সরাসরি আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও অনিয়মের জেরে আর্থিক দাবি সংক্রান্ত একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা ও বিদেশের আরবিট্রেশন কোর্টে। সব মিলিয়ে ১০০ কোটির বেশি টাকার ক্ষেত্রে গরমিল ও অনিয়ম হয়েছে বলে রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে।
রাজ্য বিধানসভায় পেশ হওয়া রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০০৪ থেকে ২০০৬-০৭ সময়কালেই সবচেয়ে বেশি আর্থিক অনিয়ম হয়েছে দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে। সেই সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য(Buddhadeb Bhattacharya)। ECSC বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থাকে পণ্য সরবরাহ ও রফতানির জন্য অগ্রিম অর্থ দেয়। সেই টাকা বহু ক্ষেত্রে নয়ছয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক ফৌজদারি মামলাও চলছে আদালতে। সংস্থার তৎকালীন শীর্ষকর্তারা ওই সব মামলায় অভিযুক্ত। বার্ষিক রিপোর্টে দুই অভিযুক্ত IAS অফিসার দেবাদিত্য চক্রবর্তী ও আর এস জামির সহ মোট ৩ জন পদস্থ কর্তার গ্রেফতারির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দুই অফিসার ECSC’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে ছিলেন। বাম আমলে এই অনিয়ম হলেও এ ব্যাপারে FIR করে তদন্ত শুরু হয় ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পর।
যে আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় ওই দুই IAS অফিসার গ্রেফতার হন, তা হয়েছিল চিনে লৌহ আকরিক পাঠাতে গিয়ে। তাছাড়া পাম তেল, তুলা, আলু, জিঙ্ক, কপার ক্যাথোড, বস্ত্র, আলু, সব্জি প্রভৃতি সামগ্রী পাঠানোর ক্ষেত্রেও দেদার অনিয়ম হয়েছে। অগ্রিম দেওয়া টাকা ফেরত পায়নি সংস্থা। আকরিক লোহা পাঠাতে গিয়ে সংস্থার ৫৮ কোটি ২৪ লক্ষ টাকা ক্ষতির উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। জাহাজে পণ্য পাঠানোর জন্য ওই টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল একটি সংস্থাকে। কিন্তু জাহাজের ভাড়া মেটানো হয়নি। জালিয়াতি করে পণ্য অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া হয়। নিম্নমানের আকরিক লোহা পাঠানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) ও হংকংয়ের আরবিট্রেশন আদালতে কোটি কোটি টাকা দাবি করে মামলা হয়েছে। দু’টি কেসে মোট প্রায় ৭০ কোটি দাবি করে কলকাতায় মামলা হয়। হংকংয়ে আন্তর্জাতিক আরবিট্রেশন আদালতে প্রচুর অর্থ দাবি করে মামলা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ECSC’র চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘বাম আমলে এই সংস্থায় যে মাত্রায় দুর্নীতি হয়েছিল, তা অভাবনীয়। ভাবতে অবাক লাগে, বামেরা এখনও বড় বড় কথা বলে। ওদের মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে বসে থাকা উচিত। ওই সময় কোনওরকম টেন্ডার না করে পণ্য পাঠানোর জন্য অগ্রিম কোটি কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। তারপর অনেক সংস্থার কোনও খোঁজই পাওয়া যায়নি।’