নিজস্ব প্রতিনিধি: ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের দৌলতে রাতারাতি চলে আসবে সুখ্যাতি। হয়ে যাওয়া যাবে তারকা। আর সেই স্বপ্নে বুঁদ তরুণ প্রজন্ম আকছার বিপদের মুখে পড়ে যাচ্ছেন সেই সব ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতে গিয়ে। কেননা অভিনয়ের নামে তাঁদেরকে দিয়ে আদতে পর্ণ ভিডিওর শুট করা হচ্ছে যা ছড়িয়ে পড়ছে টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এমনকি যে টাকা সেই শুটের জন্য দেওয়া হবে বলা হয় সেই টাকাও দেওয়া হচ্ছে না। কলকাতা ও তার আশেপাশে এই রকমের ঘটনা বেশ কিছুদিন ধরেই ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এবার নিউটাউন থানায় সেরকমই অভিযোগ দায়ের করলেন উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এলাকার বাসিন্দা রাজদীপ হাজরা নামে এক যুবক। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে দিয়ে জোর করে পর্ণ ভিডিও শুট করানো হয়েছে। যদিও পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বছর একুশের ওই যুবক সব জেনেশুনেই এই কাজ করেছেন। খালি ভাবতে পারেননি তাঁর শুট করা ভিডিও এভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে।
রাজদীপ মঙ্গলবার সকালে নিউটাউন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন যে তাঁকে ভুল বুঝিয়ে জোর করে পর্ণ ভিডিওতে অভিনয় করতে বাধ্য করা হয়েছে। রাজদীপের দাবি, দক্ষিণ কলকাতায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে গতবছর তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় বেলঘড়িয়ার বাসিন্দা নাসিব আক্তারের। এই নাসিবই তাঁকে বলেছিল একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের সুযোগ করে দেবে। সেই সিরিজে ৮টি এপিসোড থাকবে আর প্রতিটি এপিসোডের জন্য তাঁকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সেই কথা অনুযায়ী রাজদীপ নিউটাউনের একটি হোটেলে গেলে তাঁর কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তাঁকে ওই হোটেলের একটি ঘরে আটকে রেখে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তাঁকে একটি কাগজে সই করতে বাধ্য করা হয় যাতে লেখা ছিল তিনি সেচ্ছায় ওই ভিডিও শুট করছেন। এরপর একাধিক ভিডিওতে তাঁকে নগ্ন হয়ে অভিনয় করতে বাধ্য করা হয়। যার মধ্যে সমকামিতার ভিডিও ছিল। রাজদীপের দাবি, তাঁকে বলা হয়েছিল বিদেশে ওই ধরনের ভিডিও বিক্রি করা হবে। এদেশের কেউ তা দেখতে পাবে না। কিন্তু পরে রাজদীপ দেখেন ওই সব ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরপর সোমবার রাতেই তিনি বেলঘড়িয়া থানার দ্বারস্থ হন। কিন্তু সেখানে তাঁর অভিযোগ নেওয়া হয়নি। তার জেরেই এদিন সকালে নিউটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রাজদীপ। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
রাজদীপের সঙ্গে শুট করা অপর যুবক শুভজিতেরও বাড়ি শোভাবাজারে। রাজদীপের দাবি, সেই তাঁকে ওই সিরিজে অভিনয়ের জন্য বার বার জোর করেছিল। যদিও শুভজিতের দাবি, ‘আমি ওকে কোনও ওয়েব সিরিজের কথা বলিনি। আমি বলেছিলাম পুরোটাই এই সব হবে। পর্ণ ভিডিয়ো শুট করানো হবে। টাকাটা পর্ণ ভিডিওর শুট করানো হবে বলেই দেওয়া হয়েছিল।’ রাজদীপের দাবি, তাঁকে মাত্র ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আর পুলিশের ধারনা কার্যত লোভে পড়ে ওই শুট করতে রাজি হয়েছিলেন রাজদীপ। ভেবেছিলেন এখানে তাঁর ভিডিও কেউ দেখতে পাবে না। এখন যখন দেখছেন সোশ্যাল মিডিয়াতে তা ছড়িয়ে পড়েছে তখন তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন।