নিজস্ব প্রতিনিধি: শহরে পালিত হল অসুর স্মরণ সভা। শনিবার দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া এলাকায় তেঁতুলবেড়িয়া অনুকুলচন্দ্র হাই স্কুলের সভাগৃহে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। কবিগান ও বক্তৃতার মাধ্যমে এদিন অসুর বা হুদুড় দুর্গা স্মরণ অনুষ্ঠান উদযাপন করেন আদিবাসী সমাজের মানুষজন।
প্রকৃতি সেবাশ্রম সঙ্ঘ নামের এক সংগঠনের তরফে অসুর স্মরণসভার আয়োজন করা হয় এদিন। বিগত কয়েক বছর ধরে এই স্মরণসভা আয়োজিত হয়ে আসছে বলে জানান উদ্যোক্তারা। শুধু কলকাতা শহরে নয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের একাধিক রাজ্যে আদিবাসীরা অসুর বা হুদুড়দুর্গার স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করেন প্রতিবছর। প্রকৃতি সেবাশ্রম সঙ্ঘের সম্পাদক মিলন নির্ঝর মৃধা জানান, এ বছর বাংলায় এক হাজারের বেশি স্থানে অসুর স্মরণ সভা আয়োজিত হয়েছে। কিন্তু কেন অসুরকে নিয়ে স্মরণ সভা? মিলনবাবু জানান, অসুর হলেন আমাদের এই ভূ-খন্ডে অনার্যদের রাজা, যাকে আমরা ‘হুদুড় দুর্গা’ও বলি। আদিবাসীরা ‘দাঁশাই’ নাচ ও গানের মধ্য দিয়ে ‘হায় হায়’ করে হুদুড় দুর্গার স্মৃতিতে শোকপ্রকাশ করেন। শোক পালনের দিনগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা মুষ্টিভিক্ষা করে এবং পুরুষেরা নারীর পোষাক পরিধান করে। তিনি আরও বলেন, আদিবাসী সমাজের মানুষ বিশ্বাস করেন একসময় আর্যরা এই ভূ-খন্ডে আক্রমণ করে এবং একজন আর্য নারীকে দিয়ে তাদের রাজা হুদুড় দুর্গাকে হত্যা করে।
মিলনবাবু বলেন, আসলে ‘দুর্গা’ শব্দটি হলো একটি অস্ট্রিক শব্দ এবং সেটা পুংলিঙ্গ, এর স্ত্রীলিঙ্গ হলো ‘দুর্গী’। কিন্তু হুদুড় দুর্গাকে হত্যা করার কারণে ‘দেবী’ নামক আর্য নারীর নাম হয় দেবী দুর্গা। মূল ধারার সংস্কৃতির বিপরীতে এ এক অন্য উদযাপন। কার্যত শোকের আবহে এই স্মরণ সভায় আদিবাসীরা অংশ গ্রহণ করেন। উনিশ শতকের দলিত আন্দোলনের নেতা জ্যোতিরাও ফুলে এবং সাবিত্রীবাঈ ফুলের স্মৃতির প্রতিও এদিন শ্রদ্ধা জানান আয়োজকরা।
প্রসঙ্গত ‘অসুর’ নামে একটি নৃতাত্ত্বিক উপজাতি রয়েছে ভারতে। এমনকি ভারত সরকারের শিডিউল ট্রাইব তালিকায় একেবারে শীর্ষস্থানে যাদের অবস্থান। এদিন অনুকুলচন্দ্র হাই স্কুলের সভাগৃহের অনুষ্ঠানে আদিবাসী সমাজের বিশিষ্ট কবি, শিল্পী-সহ আড়াইশো মানুষ অংশ নেন বলে জানান মিলন নির্ঝর মৃধা। এছাড়া হাজির ছিলেন শরদিন্দু উদ্দীপন, নির্মেলেন্দু বিশ্বাস, প্রশান্ত রায়, সুবল সরদার, নেপাল সিং-সহ আদিবাসী সমাজ নিয়ে কাজ করা বহু ব্যক্তি।