নিজস্ব প্রতিনিধি: আবারও বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করলেন বিজেপি (BJP) বিধায়করা (MLA)। একই পন্থায় দেখালেন বিক্ষোভ। প্রশাসন হিংসা রুখে দেওয়ার পর তাঁদের প্রশ্ন, কেন অশান্তি রুখতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না পুলিশমন্ত্রী? উল্লেখ্য, গত ৪৮ ঘণ্টায় তেমন হিংসার খবর নেই। কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রশাসন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (CM) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (MAMATA BANERJEE) দিয়েছেন কড়া বার্তা। বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার (সদ্য বহিষ্কৃত) বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই ছড়িয়েছিল হিংসা। যারা যারা হিংসায় লিপ্ত তাঁদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার বিধানসভায় (BIDHAN SABHA) বাদল অধিবেশন চলাকালীন হিংসা প্রসঙ্গ তুলে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি করেন বিজেপি বিধায়করা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশমন্ত্রী ব্যবস্থা নিচ্ছেন না হিংসা রুখতে। সেই সঙ্গে তোলেন একাধিক ইস্যু। এরপরেই ওয়াকআউট করেন গেরুয়া শিবিরের বিধায়করা। তারপর বাইরে বসে শুরু করেন বিক্ষোভ প্রদর্শন। উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম বলেন, হিংসায় যারা জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। জানানো হয়েছে, হিংসায় লিপ্ত ২০০- রও বেশি জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাফ বলেন, ‘কাওকে রেয়াত করা হবে না’। ওইদিন বলেন, হিংসার সঙ্গে যুক্ত থাকা সকলের প্রতি কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অভিযুক্ত ও ধৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি। জানানো হয়েছে, গ্রেফতার করা হবে আরও বেশ কিছু জনকে। এডিজি বলেছিলেন, ছোট- বড় সব ধরণের ঘটনা ধরেই মামলা করা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য বলেন, হিংসার ঘটনায় ৪২ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে হাওড়াতেই ২৮ টি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এর পেছনে কোনও চক্রান্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ওই দিনের পরেও গ্রেফতার করা হয়েছে আরও বেশ কয়েকজনকে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গত শনিবার ট্যুইট করেছেন। হিংসা পরিস্থিতি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আগেও বলেছি, দুদিন ধরে হাওড়ার জনজীবন স্তব্ধ করে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে । এর পিছনে কিছু রাজনৈতিক দল আছে এবং তারা দাঙ্গা করাতে চায়- কিন্তু এসব বরদাস্ত করা হবে না এবং এ সবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে। পাপ করল বিজেপি, কষ্ট করবে জনগণ?’
হিংসা বন্ধ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী। এই উত্তেজনার জন্য তিনি সরাসরি দায়ী করেছেন বিজেপি শিবিরকেই। বলেন, ভারত মানে হিন্দু- মুসলমানের মিলনক্ষেত্র। তা নিয়ে এতকাল গর্ব করা হয়েছে। সেই গর্বকে খর্ব করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েকজন ‘চ্যাংড়া মানুষ’ হিংসা ছড়াচ্ছে, ভাঙচুর চালাচ্ছে, পুলিশকে আক্রমণ করছে, সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করছে। তাদের ধরে ধরে জেলে ঢোকানো উচিৎ। অপরাধীদের জেলে ঢোকাক প্রশাসন। পীরজাদার আরও দাবি, এই হিংসা- বিক্ষোভের পেছনে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সমর্থন আছে, তার ফলেই ৩ দিন ধরে এই হিংসাত্মক পরিস্থিতি।
রাজ্য পুলিশের ডিজি নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে গত শনিবার লিখেছেন, ‘শান্তি নষ্ট হতে দেবেন না। গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। মিথ্যা খবর সম্পর্কে নিকটবর্তী থানায় জানান’। সেই সঙ্গে পোস্ট করেছেন বিশেষ ছবি। হ্যাজট্যাগ দিয়ে লেখা, ‘সত্যের সাথে সুরক্ষার সাথে’, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ ফর ইউ’। ট্যাগ করেছেন রাজ্য পুলিশের অ্যাকাউন্ট।
যে ছবি তিনি পোস্ট করেছেন সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি সতেজ আপেল, যার তলায় লেখা আছে ‘বাস্তব’। অন্য একটি আপেল শুকনো। যার তলায় লেখা ‘গুজব’। আর তার নিচেই লেখা, ‘সত্যের সাথে সুরক্ষার সাথে’। অভিনব এই ছবি দিয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাস্তব ঘটনা না প্রচার করে গুজব প্রচার করা হচ্ছে অনেক বেশি। আর তা থেকেই বিরত থাকার বার্তা দেন তিনি। শান্তি রক্ষা করার বার্তা দিয়ে তিনি ক্যাপশন লিখেছেন, মিথ্যা খবর জানতে পারলেই তা স্থানীয় থানায় জানাতে।
শনিবার ২ সভা থেকেই ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী বার্তা দেন, হিংসা বন্ধ করার। বলেন, ধর্ম নিয়ে অনেকজনই বাজে কথা বলে কিন্তু তার প্রতিবাদে হিংসার রাজনীতি করলে নবী ক্ষমা করবেন না। আরও বলেন, হিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করা যায় না। কারণ, নবীর প্রেম অন্য ধর্মকেও ভালবাসতে শেখায়।
রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম গত শনিবার দাবি করেন, এই হিংসাত্মক ঘটনার পেছেনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি আছে। তিনি বলেন, বাংলা সম্প্রীতির পীঠস্থান। তা নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তা করতে দেবে না রাজ্য সরকার।
বিধানসভা থেকে বুধবার বিজেপি বিধায়কদের ওয়াকআউট, বিক্ষোভ প্রসঙ্গে তৃণমূল শিবিরের প্রশ্ন, হিংসা স্তিমিত হওয়ার পর কেন নতুন করে বিষয়টিকে উস্কানোর চেষ্টা করছে বিজেপি?