নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন চাওয়ালা। সে স্বপ্ন ছিল ‘আচ্ছে দিন’-এর। স্বপ্ন ছিল প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকদের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে পৌঁছে যাওয়ার। স্বপ্ন ছিল প্রতি বছর দেশে ২ কোটি চাকরি তৈরি হবে। দেশবাসীও সেই স্বপ্নে বুঁদ হয়েছিল। কিন্তু কী পেল? নোটবন্দি, লকডাউন, জিএসটি, চূড়ান্ত বেকারত্ব, ১০০ টাকার পেট্রোল-ডিজেল, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার বিক্রি, ১০০০ টাকার এলপিজি সিলিন্ডার, ভর্তুকিহীন-ছাড়হীন ট্রেনযাত্রা। আরও আছে। তালিকা করতে বসলে মুদির দোকানের ফর্দও হার মেনে যাবে। এবার সেই চাওয়ালার পথে হেঁটে বঙ্গ বিজেপির নেতাকর্মী সমর্থকদের আরও শাহী স্বপ্ন দেখিয়ে দিলেন চাওয়ালার যোগ্য শিষ্য। তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই বাংলায়(Bengal) নাকি ক্ষমতায় আসবে বিজেপি(BJP) আর সেটাও পারিবারিক শাসনকে হারিয়ে। বোধহয় ভুলে গিয়েছেন বাংলা অপেক্ষা বিজেপির সর্বভারতীয় স্তরেই পরিবারতন্ত্রের বোর্ডটা ঝুলছে ঝলমল করে।
দক্ষিণ ভারতের হয়দরাবাদ(Hyderabad) এখন দেশের অন্যতম বৃহৎ মহানগর এবং তেলেঙ্গানার রাজধানী। সেখানেই বসেছিল বিজেপির ২দিনের জাতীয় কর্মসিমিতির বৈঠক। রবিবার সেই বৈঠকেই ফের বাংলার পদ্মপার্টির কর্মী থেকে নেতা মায় সমর্থকদের শাহী স্বপ্ন দেখিয়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)। বলেছেন, ‘বিজেপি খুব তাড়াতাড়ি তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করবে। কংগ্রেস পারিবারিক দল হয়ে গিয়েছে। পরিবারের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাওয়ার ভয়ে সভাপতি নির্বাচনই করছে না। তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গের পারিবারিক শাসনকে হারাবে বিজেপি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আঞ্চলিকবাদ, পরিবারবাদ এবং তোষণবাদ চলছে। এই পরিস্থিতির বদল এনে বিজেপি চায় উন্নয়নের রাজনীতি, কাজ করার রাজনীতি। কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশাতেও ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি।’
এই শাহী খোয়াবে এদিন গা ভাসিয়েছেন বাংলার পদ্মশিবিরের নেতারা। ঠিক যেভাবে গাঁজা নেশায় বুঁদ হন গাঁজাখোররা, ঠিক সেভাবেই। যুক্তি, তক্কো, বাস্তবতার উর্ধ্বে উদ্বাহু হয়ে বঙ্গ বিজেপির নেতা থেকে কর্মী মায় সমর্থকেরা এখন নেত্য করা শুরু করেছেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসব শীঘ্রই’। তা নাচুন, যত খুশি নাচুন। কত স্বপ্ন তো ছিল একুশের নির্বাচনকেও ঘিরে, মনে পড়ে। ‘আবকে বার ২০০ পার’, সেও তো শাহী স্বপ্নই ছিল, তাই না। শেষে কী হল? পদ্মের রথ থেমে গেল অর্ধেকেরও যোজন যোজন দূরে। তারপরেও রক্ষা নেই। ৭৭ থেকে ধস নামতে নামতে এবার ৫০-এ এসে দাঁড়াবে। ২০২৬-এ রাজ্য বিধানসভা থেকে হারিয়ে গেলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। কেননা সাম্প্রতিক কালের সব নির্বাচনের ফলই বলছে দ্রুত হারানো বিরোধী পরিসর ফিরে পাচ্ছে বাম আর কংগ্রেস। তৃণমূলের(TMC) তরফে অবশ্য শাহী স্বপ্নকে বেশ নবাবী আমেজেই কটাক্ষ হানা হয়েছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, ‘পরিবারতন্ত্রের কথা বিজেপি কী করে বলছে? অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের সাইনবোর্ড তো বিজেপির দেওয়ালে ঝুলছে। সিন্ধিয়ারা তো বটেই, রাজ্যে রাজ্য বিজেপি পরিবারতন্ত্র চালায়। আর বাংলায় তো মানুষের সরকার চলছে। ২০২০ সাল, ২০২১ সালে বাংলার নিত্যযাত্রী হয়ে যাওয়ার সময়েও এ সব বলেছিলেন। আর পরিবারতন্ত্রের কথা বিজেপির মুখে মানায় না।’