নিজস্ব প্রতিনিধি: বাম জমানার একদম শেষ দিকে রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রিজওয়ানুর রহমানের(Rizwanur Rahman) অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায়। ২০০৭ সালে ২১ সেপ্টেম্বর পাতিপুকুরে রেল লাইনের ধার থেকে উদ্ধার হয়েছিল গ্রাফিক্স ডিজাইনার(Graphics Designer) রিজওয়ানুর রহমানের মৃতদেহ। রিজওয়ানুরের পরিবারের তরফে তাঁকে খুনের(Murder) অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু ঘটনার পর ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে আসে আত্মহত্যার তত্ত্ব। সেই ঘটনায় আদালত CBI তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে CBI আধিকারিকেরা জানতে পারেন, ঘটনাটি আত্মহত্যার হলেও, তাতে প্ররোচনা ছিল। পরবর্তী সময় সেই মর্মে চার্জশিট পেশ করা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। সেই মামলাতেই এবার এক সাক্ষীর(Witness) লাগাতার আদালতে গরহাজিরার জেরে তার বিরুদ্ধে জারি হল গ্রেফতারি পরওয়ানা(Arrest Warrant)। সোমবার কলকাতা নগর দায়রা আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের প্রশিক্ষক হওয়ার সুবাদে মধ্য কলকাতার একটি ইনস্টিটিউটে এক শিল্পপতির কন্যা প্রিয়াঙ্কা টোডির(Priyanka Todi) সঙ্গে রিজওয়ানুরের আলাপ হয়েছিল। সেই সূত্রে প্রেম এবং পরে তাঁরা রেজিস্ট্রি বিয়েও করেছিলেন। অভিযোগ ছিল, পরবর্তী সময় জোর করে প্রিয়াঙ্কাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ওই শিল্পপতি পরিবার জোর দিচ্ছিল। পরে নানা প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে বাড়িও ফিরিয়ে এনেছিল টোডি পরিবার। ওই ঘটনার কিছুদিন পরেই রিজওয়ানুরের মৃতদেহ পাওয়া যায় রেললাইনের ধারে। সেই ঘটনায় রীতিমত সংখ্যালঘু সমাজের ক্ষোভের মুখে পড়ে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। আবার এটাও সত্যি যে এই ঘটনার হাত ধরেই রিজের পরিবারের সঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) যোগাযোগ গড়ে ওঠে যে সম্পর্ক আজও অটুট রেখেছেন মমতা। প্রতি বছর ইদের দিন মমতা রিজের বাড়িতে যান তাঁর মা কিশওয়ার হাজানের সঙ্গে দেখা করতে। রিজের দাদা রুকবানুর এখন ৩ দফার তৃণমূল বিধায়ক। যদিও রিজের মামলা যেভাবে বছরের পর বছর ধরে শম্বুক গতিতে চলছে, তাতে এই মামলা কবে শেষ হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
আদালত সূত্রের খবর, বিচারভবনের যে এজলাসে এই মামলার শুনানি চলছিল, সেখানে মামলার বিশাল ভার। আর সে কারণেই এই মামলাটির শুনানি ঠিক মতো হচ্ছিল না। কার্যত পরবর্তী তারিখ পড়া ছাড়া আর কিছুই হচ্ছিল না। CBI-য়ের তদন্ত করা এই মামলায় জামিনে থাকা ৭ অভিযুক্তের মধ্যে ৫ জন গতকাল আদালতে হাজিরা দিয়েছিল। গরহাজির ছিলেন দু’জন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন এক আইপিএস কর্তা। তবে তাঁদের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন আইনজীবীরা। তবে সাক্ষীর লাগাতার আদালতে গরহাজিরা বিচারককে ক্ষুব্ধ করে তোলে। তার জেরেই জারী হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা।