নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশজুড়ে সবাই মনে করেন ব্যবসায়ীরা(Businessmen) ভারতীয় জনতা পার্টি(BJP) বা বিজেপি’র সব থেকে বড় সমর্থক। এই দাবি যে ভুল সে কথা জোর দিয়ে বলাও যায়। সেই ছবির ব্যতিক্রম নয় খাস কলকাতা(Kolkata) শহরও। মহানগরীর বেশির ভাগ হিন্দিভাষী মানুষ ও অবাঙালি ব্যবসায়ীরা বিজেপির সমর্থক। সেই অবাঙালি ব্যবসায়ীদের সব থেকে বড় ঘাঁটি বড়বাজার(Barabazar)। অথচ সেই বড়বাজারকেই বিজেপির ‘নবান্ন অভিযান’-এর কারণে ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে দাঁড়াতে হল। পুজোর মুখে এই ক্ষতি বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে বিজেপির প্রতি। কেন পুজোর মুখে এই ‘নবান্ন অভিযান’(Nabanna Abhijan) সংগঠিত হল, এখন সেই প্রশ্নই তুলেছেন বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা। বিজেপির নবান্ন অভিযানে কতটা রাজনৈতিক লাভ কতখানি হল, তার হিসাব নেই। কিন্তু পুজোর মুখে বহু মানুষের রুটিরুজিতে যে ধাক্কা লাগল তার খেসারত কে দেবে, সেই প্রশ্নও উঠে গিয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে এই প্রশ্ন তুলেই কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হতে চলেছে জনস্বার্থ মামলা।
মঙ্গলবার ছিল বিজেপির নবান্ন অভিযানের কর্মসূচি। সেই কারণে দলের ৩টি মূল মিছিলের ১টি বড়বাজার হয়ে হাওড়া ব্রিজ হয়ে নবান্নের পথে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই মিছিল হাওড়া ব্রিজের যাওয়ার আগেই আগেই আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ প্রশাসন। সেই কারণেই বড়বাজারের বুক চিরে চলে যাওয়া মহাত্মা গান্ধি রোডেই ওই মিছিল আটকানোর সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। মিছিল আটকালে যে হাঙ্গামা বাঁধবে সেটা বুঝে বড়বাজারের বেশির ভাগ দোকানদাররা নিজেরাই দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি পুলিশ হাওড়া ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়ায় বাস চলাচলও কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তাই বড়বাজারে যেটুকু দোকান খোলা ছিল সেখানেও দিনভর ক্রেতাদের দেখা মেলেনি। যেমন পণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব হয়নি, তেমনই মেলেনি ক্রেতাও। ফলে বিপুল অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিমত, পুজোর মুখে বড়বাজারে নিত্যদিন প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কেনাকাটা হয়। শুধু পোস্তাতেই ১০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। গতকাল বিজেপির অভিযানে সেই কেনাকাটা বা লেনদেনের কিছুই হয়নি। এই আর্থিক ক্ষতির দায়ভার কী বিজেপি নেবে? কেন উৎসব মরশুমে এই কর্মসূচি নিল বিজেপি? এতে কার লাভ হল?
মঙ্গলবার সকাল থেকেই বড়বাজার এলাকায় তেমন ব্যবসায়িক ব্যস্ততা ছিল না। মহাত্মা গান্ধী রোডের দু’ধার থেকে শুরু করে কাটরাগুলিতে দোকানে চেনা ভিড় চোখে পড়েনি। কোথাও আবার নিরাপত্তার খাতিরে দোকানের ঝাঁপ অর্ধেকটা নামিয়ে রাখা হয়েছে। এমন ছবিও চোখে পড়েছে। পাইকারি বাজারে লেনদেন প্রায় হয়নি। সব মিলিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় রাজনৈতিক ডামাডোলে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তাতে কার্যত ধর্মঘটের চেহারা ফিরেছিল বড়বাজারের বুকে। উৎসবের মরশুমে এমন রাজনৈতিক জুলুমবাজিকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা। কোভিড ও লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে যখন অর্থনীতি ফের একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তখন বিজেপির এই কর্মসূচি ধাক্কা দিয়েছে পুজোর বাজারে।