নিজস্ব প্রতিনিধি: সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়(Sudip Banerjee), তাপস রায়, কুণাল ঘোষ(Kunal Ghosh)। ৩জনই একই পরিবারের সদস্য ছিলেন। কিন্তু সেখানেই কলহ। সুদীপের সঙ্গে কুণাল ও তাপসের বিবাদ তৃণমূলের অন্তত কারও অজানা নয়। তাপস ইতিমধ্যেই তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে(BJP)। শুধু তাই নয়, সুদীপ যে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সেই কেন্দ্র থেকেই বিজেপি প্রার্থী করেছে তাপসকে(Tapas Roy)। খালি চোখে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের(TMC) জয় আসে চোখ বুজে। কিন্তু এবার সেই জয়ের পথেই যে কাঁটা থাকছে সেটা এদিন দেখিয়ে দিলেন কুণাল। মে দিবস উপলক্ষ্যে এদিন একটি কলকাতার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি ক্লাব শ্যামসুন্দরতলায় রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেই অনুষ্ঠানেই এদিন হাজির ছিলেন কুণাল ও তাপস। সেই অনুষ্ঠানেই তাপসকে পাশে বসিয়ে কুণাল যে বার্তা দিলেন তা নিয়ে এখন উত্তর কলকাতার পাশাপাশি তৃণমূলের অন্দরেও জল্পনা ও বিতর্ক দুই ছড়িয়ে পড়েছে। নেপথ্যে সেই কুণাল ও তাপসের সঙ্গে সুদীপের বিবাদ।
এদিন শ্যামসুন্দরতলায় রক্তদান শিবিরের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন কুণাল। কুণাল যখন পৌঁছন তখন মঞ্চে বসে রয়েছেন তাপস এবং উত্তর কলকাতার বিজেপি জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ। ছিলেন না তৃণমূলের অপর কেউ। সেখানেই কুণাল নিজের বক্তব্য রাখার সময়ে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি তাপস রায়ের সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই। উনি যত দিন জনপ্রতিনিধি ছিলেন, তত দিন মানুষকে পরিষেবা দিয়েছেন। দিন-রাত তাঁর দরজা মানুষের জন্য খোলা থাকত। মানুষ যখন তাঁকে ডেকেছেন তখন পেয়েছেন। আমরা তাপস রায়কে এক পরিবারে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পারিনি। আজকে উনি প্রার্থী। কিন্তু অন্য দলের। আমাদের দলের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা আমাদের দলের প্রার্থীর জন্য কাজ করব। তাপসদার দলের কর্মীরা তাঁর জন্য কাজ করবেন। এখানে কোনও ছাপ্পা ভোট হবে না। যার ভোট তাঁকে দিতে দিন। মানুষ ঠিক করে নিন, কে প্রকৃত প্রার্থী। যদি কোথাও কোনও ছাপ্পা হয়, জেনে রেখে দেবেন তৃণমূল নেতৃত্বই বারণ করবে, কোনও অবস্থায়, কোনও বুথে মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা ভোটও যেন না পড়ে।’
আর কুণালের এই বক্তব্য নিয়েই বেঁধেছে বিবাদ। প্রশ্ন উঠেছে, কুণাল কী ঘুরিয়ে সুদীপের বিরুদ্ধে তাপসকেই ভোট দিতে বললেন? তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপিকে ভোট দিতে বললেন? তৃণমূল ছেড়ে তাপস রায়ের বিজেপি-যাত্রার নেপথ্যে এক এবং অদ্বিতীয় কারণ যে সুদীপ, তা বঙ্গ রাজনীতিতে মোটামুটি সর্বজনবিদিত। কিন্তু তা বলে কুণাল তৃণমূলে থেকে তৃণমূলকেই হারাতে বলবেন? বিতর্কের মূলে দুটি কথা। প্রথমত, কুনাল জানিয়েছেন, ‘মানুষ ঠিক করে নিন, কে প্রকৃত প্রার্থী’। অর্থাৎ কুণাল বুঝিয়েই দিচ্ছেন সুদীপের প্রার্থী পদকে তিনি মান্যতা দিচ্ছেন না। দ্বিতীয়ত, ‘এখানে কোনও ছাপ্পা ভোট হবে না’। প্রশ্ন এই কথার মাধ্যমে কুণাল কী বোঝাতে চেয়েছেন যে সুদীপ ছাপ্পা ভোটের ভরে জয়ী হয়েছেন এত বছর ধরে? অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কুণালের বক্তব্য শাসকদলের মধ্যে নতুন করে জল্পনা তৈরি করে দিয়েছে। তৃণমূলের অনেক নেতা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, কুণাল এক বারও বলেননি সুদীপকে জেতান। ব্যক্তি সুদীপের প্রশংসাও করেননি। উল্টে তাপসের তারিফ করে অনেক শব্দ খরচ করেছেন। ‘প্রকৃত প্রার্থী’ শব্দবন্ধ সেই জল্পনাকে আরও খানিকটা উস্কে দিয়েছে।