নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ রয়েছেন খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের(NKSM) অধীনে। এদের মধ্যে এতদিন আড়াই কোটি গ্রাহক মাসে মাথাপিছু দু’কেজি করে চাল(Rice) ও তিন কেজি করে গম(Wheat) পেতেন। এছাড়াও আরও ৯০ লক্ষ গ্রাহক পেতেন মাথাপিছু এক কেজি করে চাল ও গম। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার এই প্রকল্পে গমের বদলে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তার জেরেই ক্ষুব্ধ রাজ্য সরকার। কেননা গমের বদলে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন্দ্র সরকার নিয়েছে রাজ্যকে অন্ধকারে রেখেই। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই মোদি সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু যে রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এমন নয়, কার্যত রাজ্যের ঘাড়ে বাড়তি চাল কেনার দায়িত্ব বর্তেছে কেন্দ্র। আর এখানেই রাজ্যের ক্ষোভ বেশি চড়েছে। যদিও নবান্ন(Nabanna) সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়তি চাল পাঠানোর দায়িত্ব রাজ্যের তরফে ঠেলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের কোর্টেই। এফসিআই-কে ওই বাড়তি চাল পাঠাতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলার যে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন তাঁরা আগামী জুন মাস থেকে আর গম পাবেন না। এ রাজ্যের খাদ্য দফতর কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও, এর কার্যকরিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। প্রথমত, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় থাকা দুই শ্রেণির গ্রাহকরা এরপর থেকে যথাক্রমে শুধু মাথাপিছু করে মোট ৫ কেজি ও মোট ২ কেজি করে চাল পাবেন। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে বাংলার মানুষের খাদ্যভাস অনেক আগেই বদলে গিয়েছেন। এখন অনেক মানুষই দুপুরে ভাত খেলেও রাতে রুটি খান। কেউ কেউ আবার সকালের জলখাবারেও রুটি খান। এখন কেন্দ্র সরকার গমের পরিবর্তে চাল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই মানুষগুলিই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। কেননা এক তো বাড়তি চাল পেলেও গম না পাওয়ার কারনে তাঁদের তা খোলাবাজার থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে হবে। ফলে বাজারেও আটা ও ময়দার চাহিদা বেড়ে যাবে হুট করে। বাড়বে দামও। যে লক্ষ্য নিয়ে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প চালু করা হয়েছে কার্যত তাও বৃথা যাবে।
রেশন ডিলারদের সর্বভারতীয় সংগঠনের তরফেও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের দরুন ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সংগঠনের তরফে সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, ‘কেন্দ্র সরকারের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের নয়া সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে। বাংলার মানুষ অনেক বছর আগেই খাদ্যভাস পরিবর্তন করে ফেলেছেন। বেশির ভাগ মানুষ দুপুরে ভাত খেলেও সকালে ও রাতে রুটি খেতেই অভ্যস্ত। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের যে গমের বরাদ্দ কমিয়ে চাল বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাংলার মানুষের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করবে। এই অগ্নিমূল্যের বাজারে তাঁরা খোলাবাজার থেকে গম বা আটা, ময়দা আদৌ কিনতে পারবেন কিনা তা নিয়ে স্নদেহ আছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্প চালু হয়েছিল সেই উদ্দেশ্যই ধাক্কা খাবে।’ নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র সরকার বাড়তি চাল রাজ্যকে জোগাড় করতে বললেও, বাংলার তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের নয়া সিদ্ধান্তে যে অতিরিক্ত চালের প্রয়োজন হবে, তা এফসিআই-কেই সরবরাহ করতে হবে। বাড়তি চাল যোগাতে হবে কেন্দ্রকেই। এই অতিরিক্ত চাল সরবরাহ করার দায়িত্ব রাজ্যের খাদ্য দফতর কোনওভাবেই নিজেদের ঘাড়ে নেবে না।