নিজস্ব প্রতিনিধি: নক্ষত্র পতন কলকাতার বুকে। সেই শোকে স্তব্ধ দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। কার্যত কাঁদছে কল্লোলিনী তিল্লোত্তম। কাঁদছেন নক্ষত্রের অনুরাগীরাও। ভারাক্রান্ত হৃদয় দেশের সঙ্গীতমহলেরও। থেমে গিয়েছেন কে কে(KK)। আর গান গেয়ে উঠবে না তাঁর কন্ঠ। খালি রয়ে গেল তাঁর কন্ঠে গেয়ে ওঠা সব গান। এই শিল্পীর মৃত্যুতে তাই ইতিমধ্যেই শোকবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। নিজের টুইটে(Tweet) এদিন তিনি লিখেছেন, ‘বলিউডের প্লে ব্যাক গায়ক কে কে-র আকস্মিক ও অকালমৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। সমস্ত রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, তাঁর শেষকৃত্য, পরিবারকে সহায়তা দিতে গতকাল রাত থেকেই কাজ করছেন আমার সহকর্মীরা। তাঁর মৃতুতে গভীর সমবেদনা জানাই।’ পাশাপাশি এদিন বাঁকুড়ার(Bankura) সভামঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘গান স্যালুটে(Gun Salute) বিদায় জানানো হবে শিল্পীকে। সম্ভব হলে আমিও যাব তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে। কে কে’র স্ত্রীর সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।’
তবে কে কে’র এই মৃত্যুর পিছনে মঙ্গলবারের নজরুল মঞ্চের অনুষ্ঠানের আয়োজকদের দিকে বেশ কিছু গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে। প্রথম অভিযোগ, নজরুল মঞ্চে যেখানে ২৪০০ আসন রয়েছে সেখানে প্রেক্ষাগৃহের অন্দরেই সাড়ে ৩ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল। আর প্রেক্ষাগৃহের বাইরের চত্বরেও ছিল প্রায় সমান সংখ্যক দর্শক যারা কার্যত উন্মাদের মতো প্রেক্ষাগৃহে ঢোকার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের ঠেকাতে প্রেক্ষাগৃহের নিরাপত্তারক্ষীরা একসময় বাধ্য হন অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে স্প্রে করে ওই দর্শকদের ঠেকিয়ে রাখতে। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। দ্বিতীয় বড় অভিযোগ, প্রেক্ষাগৃহের গরম। অনেকেই অভিযোগ করেছেন এসি চলছিল না। কেউ কেউ আবার বলছেন এসি চালিয়েও গরম কাটানো যায়নি। গরম যে ছিল তার প্রমাণ মিলেছে অনুষ্ঠানের বেশ কিছু ফুটেজে যেখানে দেখা যাচ্ছে কার্যত দর দর করে ঘামছেন কে কে। বার বার সাদা তোয়ালেতে ঘাম মুখছেন। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল সেটাই এখন খতিয়ে দেখতে কড়া পুলিশি তদন্তের দাবি উঠেছে নানান মহলে।
সঙ্গীতশিল্পী কে কে-র মৃত্যুতে ইতিমধ্যেই নিউ মার্কেট থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতা নাকি অন্য কোনও কারণে সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যু তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিন গ্র্যান্ড হোটেলে যান কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি ক্রাইম মুরলীধর শর্মা ও ডিসি সেন্ট্রাল রূপেশ কুমার। গ্র্যান্ড হোটেলের শিফট ম্যানেজার, হোটেল কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ আধিকারিকরা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও। ইতিমধ্যেই আলিপুরের সিএমআরআই হাসপাতাল থেকে কে কে’র দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য। যদিও চিকিৎসকেরা গতকাল রাতেই প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছেন এই বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী। কিন্তু তারপরেও তাঁর দেহে যেহেতু আঘাতের চিহ্ন মিলেছে ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে তাই ময়নাতদন্ত ও করা হচ্ছে তাঁর দেহের। সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সবাই কার্যত সেই দিকেই তাকিয়ে থাকছেন।
যদিও কে কে’র ম্যানেজার রীতেশ ভাট জানিয়েছেন, গতকালের অনুষ্ঠান শেষে নজরুল মঞ্চ থেকে গ্র্যান্ড হোটেলে আসার সময় গাড়িতে শীত করছিল কে কে-র। এসি বন্ধ করে দিতে হয় তাই। একইসঙ্গে তাঁর হাতে-পায়ে ক্র্যাম্প ধরতেও শুরু করে। যদিও হোটেলে ফিরে অনুরাগীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ছবিও তোলেন কে কে। কিন্তু হোটেলের ঘরে ঢুকে সোফায় বসতে গিয়ে পড়ে যান। আর তার জেরেই চিকিৎসকেরা মনে করছেন অনুষ্ঠানের সময়েই সম্ভবত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন কে কে। কিন্তু সেই সময়ে নিজের দিকে নজর না দিয়ে চূড়ান্ত পেশাদার শিল্পী হিসাবে দর্শকদের খুশি করার দিকেই মন দিয়েছিলেন শিল্পী। আর তাতেই বিপদ বেড়ে যায়।