নিজস্ব প্রতিনিধি:বেঙ্গালুরুতে বিস্ফোরণের ঘটনায় ধৃত ২ জঙ্গি ৩৫টি সিম কার্ড সংগ্রহ করেছিল। আত্মগোপন করে থাকার জন্য ৩৫ টি সিম কার্ড ব্যবহার করেছিল। জাল আধার কার্ড তৈরি করে এতগুলি সিম কার্ড জঙ্গিরা সংগ্রহ করেছিল। কলকাতায় লেলিন সরণিতে প্যারাডাইস হোটেলে আত্মগোপন করে থাকার পাশাপাশি চাঁদনিচকে একটি মোবাইলের দোকানে জঙ্গিরা নিজেদের খারাপ হয়ে যাওয়া মোবাইল সারাইও করেছিল। যে দোকানে জঙ্গিরা মোবাইল সারাই করেছিল সেই দোকানের মালিক এবং এক কর্মচারীর বয়ান এনআইএ সংগ্রহ করে। এন আই এ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভীত মুসাফির ও আব্দুল্লাহ নিজেদের কবি যাতে ক্লোজ সার্কিট(CCTV) ক্যামেরায় দেখা না যায় তার জন্য সব সময় টুপি ও মাস্ক ব্যবহার করত। গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে জঙ্গিরা কখনো কলকাতা কখনো দার্জিলিং কখনো বা দিঘায় আত্মগোপন করেছিল। বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে গিয়েছিল।বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ কাণ্ডে নিউ দিঘার আয়ুস ইন্টারন্যাশনাল হোটেল থেকে দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে এনআইএ(NIA)।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন হোটেল কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এই ঘটনায় দিঘা হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করা হয়। জানা গেছে দিঘার যে হোটেলে ওই জঙ্গিরা ছিলেন সেই হোটেলে ট্যুরিস্ট রেজিস্টার্ড বুক এবং ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার যাবতীয় ফুটেজ এনআইএ সংগ্রহ করে নিয়েছে। দিঘার যে হোটেলে জঙ্গিরা ছিল সেখানে তাদের জুতো পাওয়া গিয়েছে।দিঘার টুরিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এই ঘটনার পর দিঘার হোটেলের মালিকরা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে টুরিস্টদের ক্ষেত্রে আরও কড়া নিয়ম কিভাবে বলবৎ করা যায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যত সময় এগোচ্ছে ততই বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ কাণ্ডে ধৃত ২ জঙ্গির কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য সংগ্রহ করছে এন আই এ। জানা গিয়েছে এই দুই জঙ্গির সন্ধানে ১৮ দিন ধরে তারা যেসব হোটেলে গা ঢাকাতেই ছিল এই রকম ১৫টি হোটেলে হানা দিয়েছিল এন আই এ টিম। জঙ্গি আব্দুল মতিন আহমেদ নিজেকে কোন হোটেলে ভিগনেশ বি ডি নামে পরিচয় দিয়েছিল আবার কোন হোটেলে সে নিজেকে আনমোল কুলকার্নি বলে নিজের নাম দাবি করেছিল। সেক্ষেত্রে কখনো সে নিজের ঠিকানা কর্নাটকের কাটা বুরাগির বলে উল্লেখ করেছিল। তার সঙ্গী মুসাফির হুসেন শাজিব নিজের নাম ইউশা শাহনওয়াজ প্যাটেল বলে পরিচয় দিয়েছিল। নিজের ভুয়ো ঠিকানা উল্লেখ করেছিল মহারাষ্ট্রের থানের পাল ঘরের কাচেরি রোড মহাবীর ভবন। কলকাতায়(Kolkata) আসা প্রসঙ্গে তারা কোথাও নিজেদের পর্যটন ব্যবসায়ী কোথাও বা শুধু অফিসিয়াল বলে উল্লেখ করত। তদন্তে উঠে আছে বেঙ্গালুরুতে কাঁপেতে বিস্ফোরণের পর তারা ট্রেনে চেপে চেন্নাই(Chennai) পালিয়ে গিয়েছিল।
সেখান থেকে আবার কখনো পাশে কখনো ট্রেনে কখনো বা বিভিন্ন রূপ বদলে ১০মার্চ তারা পৌঁছেছিল কলকাতার হাওড়া স্টেশনে। এরপর সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে তারা লেনিন স্মরণে প্যারাডাইস হোটেলে ঘর ভাড়া নিয়েছিল। সেখানে যে ঘরটিতে তারা ছিল সেই ঘরটির প্রতিদিন ভাড়া ছিল ৫৬০ টাকা। ১২ মার্চ তারা এসে এন ব্যানার্জি রোডে(S .N .Banerjee Road) অপর একটি হোটেলে নয়শ টাকা দিয়ে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ছিল। এর মাঝে তারা দার্জিলিঙে গিয়েছিল ।সেখান থেকে ফিরে আবার তারা কলকাতার একটি হোটেলে ৭০০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঘর নিয়েছিল। মাঝে বেশ কিছুদিন এই দুই জঙ্গি উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেছিল বলে গোয়েন্দারা মনে করছে। একুশে মার্চ দুপুর একটাই অটো করে ওই দুই জঙ্গি খিদিরপুর একটি হোটেলে প্রবেশ করেছিল। সেখানে হাজার টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিল। হাজার টাকার ঘরভাড়া যে হোটেলে নিয়েছিল সেখানে পরিচয় পত্র দেওয়ার কথা থাকলেও তারা দেয়নি, উল্টে বাইশে মাছ সন্ধের পর রেজিস্টারের খাতার পাতা ছিড়ে নিয়ে তারা পালিয়ে গিয়েছিল।
সেই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেছে সেই দৃশ্য ধরা পড়ে। ২৫ মার্চ পর্যন্ত কলকাতায় ওয়ার্ড গঞ্জ একবালপুর এলাকায় দুটি হোটেলে তারা ছিল। ২৫ মার্চ দুপুরে একবালপুর থানার অদূরে একটি হোটেলে হাজার টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিল। ২৮ মার্চ দুপুরে দু দফায় তিন হাজার টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিল তারা। ওই হোটেল গুলিতে তারা খাওয়া-দাওয়া করত না। বাইরের ব্যস্ত রাতে খাওয়া-দাওয়া করত। হোটেলের কর্মীদের সঙ্গে কম কথা বলতো। ২৮ মার্চ তারা প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এগরাতে গিয়েছিল। সেখানে আইএসের স্লিপার ছেলে সদস্যের বাড়িতে থাকার পর তারা পৌঁছেছিল কাঁথিতে। সেখান থেকে গিয়েছিল দিঘাতে। এরপর সমুদ্র সৈকতে একাধিক হোটেলে থাকার পর তারা পৌঁছেছিল নিউ দিঘায়(New Digha)। সেখান থেকেই অবশেষে এন আই এর হাতে গ্রেপ্তার হয় দুই জঙ্গী।