নিজস্ব প্রতিনিধি: তরুণ প্রজন্ম চাকরি খুঁজছে। তাঁদের চাকরি পাইয়ে দিতে নানান সময়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ‘জব ফেয়ার’ বা চাকরি মেলাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখান থেকে চাকরিও পাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু বাংলার ছবিটা যেন একটু ভিন্ন। এখন যেন এ রাজ্যে চাকরি কেড়ে নেওয়ার মেলা বসে গিয়েছে। চতুর্দিক থেকে অভিযোগ উঠছে, প্রকৃত যোগ্যদের বঞ্চিত করে ঘুরপথে অন্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। পাতি বাংলায় দুর্নীতি হয়েছে। আর সেই সব দুর্নীতির জেরে কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) দায়ের হয়েছে একের পর এক মামলা। আর সেই সব মামলায় উঠেও আসছে কীভাবে প্রকৃত যোগ্যদের বঞ্চিত করে অন্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন, দমকল, খাদ্য দফতরের পর এবার পালা খাস মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের(Health Department)। সেখানেও এবার চাকরি যেতে পারে বেশ কিছু মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজিস্টদের(Medical Lab Technologist)। নেপথ্য আরও এক মামলা যার শুনানি শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর ২০১৮ সালে মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। এখন শুকদেব মাইতি(Sukhdev Maiti) নামে এক চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন যে, তাঁকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাঁর দাবি, একই যোগ্যতাসম্পন্ন অন্যান্যরা বেশি নম্বর পেয়ে চাকরি পেয়েছেন। অথচ তিনি পাননি। কেন এটা হয়েছে। কার্যত এই একই দাবি নিয়ে তিনি এর আগে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে(SAT) বা স্যাট-এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু শুকদেব যেহেতু চাকরি পাননি তাই তিনি রাজ্য সরকারের কর্মচারি নন। সেই কারন তুলে ধরেই স্যাট এই মামলা শুনতে অস্বীকার করে। যার জেরে শুকদেব কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলার শুনানি শুরু করে। সেখানেই আদালতের পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ মনে করছে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক হারে স্বজনপোষণ, পক্ষপাতিত্ব এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।
বেঞ্চ জানায়, স্নাতকোত্তর যোগ্যতার জন্য মামলাকারী শুকদেব মাইতিকে যথাযথ নম্বর দেওয়া হয়নি। অথচ একই যোগ্যতাসম্পন্ন অন্যান্যরা বেশি নম্বর পেয়ে চাকরি পেয়েছেন। যে মেধা তালিকা আদালতে পেশ করা হয় স্বাস্থ্য দফতরের তরফে, তাতে দেখা যাচ্ছে ইন্টারভিউতে কে কত নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু, অন্যান্য যোগ্যতার ক্ষেত্রে কার কত নম্বর, তা জানা যাচ্ছে না। যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের সিংহভাগই স্রেফ ইন্টারভিউয়ের নম্বরের ভিত্তিতেই সুযোগ পেয়েছেন যা সঠিক পদ্ধতি নয়। কারও ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের পছন্দের কিছু প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হল অথচ যোগ্যরা সেই সুযোগ পেল না, এটা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। হতে পারে, অযোগ্যদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। তাই সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে প্রাক্তন বিচারপতি জয়ন্তকুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হল। প্রার্থীদের নম্বর প্রদান, নিয়োগের সুপারিশ দেওয়া থেকে নিয়োগ সম্পর্কে কমিটি বিস্তারিত তদন্ত করবে। কমিটিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সচিব ছাড়াও থাকবেন আইনজীবী অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। চার সপ্তাহে তদন্ত শেষ না করা গেলে অতিরিক্ত সময় চাওয়া যাবে। যাঁরা ইতিমধ্যেই এই পদের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি এই মামলার ফয়সালার ওপর নির্ভর করবে। আগামী ১০ আগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানি।