নিজস্ব প্রতিনিধি: স্ত্রী এবং সন্তানকে ফেলে রেখে সৌদি আরবে(Saudi Arabia) চম্পট দিয়েছে স্বামী! থানা পুলিশ(Police) করে কোনও লাভ না পেয়ে অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছেন স্ত্রী। আর সেই মামলাতেই পলাতক স্বামীর নাগাল পেতে পুলিশকে ইন্টারপোলের(Interpol) দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশ দিল আদালত। স্ত্রী ও সন্তানকে ফেলে রেখে মধ্যপ্রাচ্যে গা ঢাকা দেওয়া গুণধর স্বামীর নাম অলোক কুমার দাস। নিবাস দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া এলাকার নবপল্লী উত্তরপাড়ায়। তাঁর স্ত্রীর নাম সুজাতা দাস। সুজাতাই স্বামীর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের(Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন। সাম্প্রতিক কালে কলকাতার বুকে এই ধরনের ঘটনায় পুলিশকে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়ার আদালতের নির্দেশ খুব একটা দেখা যায়নি। সেই হিসাবে এই মামলা বেশ ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে।
আরও পড়ুন ডিসেম্বর থেকেই পে-স্লিপ বাধ্যতামূলক বঙ্গে, সিদ্ধান্ত রাজ্যের
জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় অলোক ও পর্ণশ্রীর বাসিন্দা সুজাতার। বিয়ের বছর দেড়েকের মধ্যে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন সুজাতা। অভিযোগ, সন্তান জন্মানোর বছরখানেক পর থেকেই অন্য এক মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অলোক। যার জেরে সংসারে নিত্যদিনের অশান্তি চরমে ওঠে। একসময় স্ত্রী আর সন্তানকে ছেড়ে ওই মহিলার সঙ্গে ঘর বাঁধেন অলোক। এরপর স্বামীর বাড়ি ছেড়ে গড়িয়ার ফরতাবাদ এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে সন্তানকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন সুজাতা। পাশাপাশি অলোকের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা আইনের ৫ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলিপুর আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় ৩ বছর মামলা চলার পর সুজাতার পক্ষেই সুবিচার দেয় আদালত। স্ত্রী এবং সন্তানের দেখভালের জন্য এককালীন ৩০ হাজার টাকা এবং প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে খোরপোশ ধার্য করে আদালত। কিন্তু তাতে কোনই লাভ হয়নি। আদালতের নির্দেশকে পাত্তা দেননি অলোক। স্ত্রী এবং সন্তানকে এক পয়সা দেওয়া তো দূরের কথা, যে মহিলার সঙ্গে অলোকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল, তাঁর নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিয়ে দেশ ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান অলোক। এরপর ফের একবার আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় সুজাতাকে।
আরও পড়ুন বিধায়কদেরও এবার পঞ্চায়েতে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল
সুজাতার সেই দ্বিতীয় মামলার জেরে আদালতের তরফ থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে অলোকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সেই পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে আদালতের তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয় যে অলোক আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন। এই অমান্যতা আদালত অবমাননার সামিল। তাই গ্রেফতারির নির্দেশ। যদিও এত কিছু করেও কোন ফল হয়নি। পুলিশ অলোকের সন্ধান না পাওয়ায় তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তার জেরে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সুজাত। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলার শুনানিতে আইনজীবী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়, দেবারতি চৌধুরী এবং বিবেক দে সমস্ত বৃত্তান্ত তুলে ধরার পাশাপাশি সওয়ালে বলেন, অভিযুক্ত দেশ ছেড়েছেন মানেই পুলিশের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। এরপরই বিচারপতি নরেন্দ্রপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন, মধ্যপ্রাচ্যে কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন অলীক তা ইন্টারপোলের সাহায্য নিয়ে খুঁজে বের করতে। তারপর সেখান থেকে গ্রেফতার করে আনা হোক অলোককে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও বিদেশমন্ত্রকের সাহায্যও নিতে বলা হয়েছে পুলিশকে। এর জন্য অলোককে খুঁজে বের করতে অবিলম্বে ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হয়ে সংশ্লিষ্ট ধারায় নোটিস জারির ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে পুলিশকে।