নিজস্ব প্রতিনিধি: বেসরকারি বাস ভাড়া(Private Bus Fare) নিয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট(Calcutta High Court)। সেই নির্দেশে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি বাস ও মিনিবাসগুলি রাজ্য সরকার(West Bengal State Government) নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নিতে পারবে না। সরকার অনুমোদিত ভাড়ার তালিকা(Fare Chart) প্রতিটি বাসে রাখতে হবে। যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট বাস বা মিনিবাসের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে রাজ্য পরিবহণ দফতরকে। কিন্তু এই নির্দেশের পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে আদৌ মূল সমস্যার সমাধান হবে তো? আদালতের রায় আদৌ মানবেন তো বাস মালিকেরা? কেননা বাস মালিকদের নানা সংগঠন(Bus Owners Associations) সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতের রায় বাধ্যতামূলক ভাবে মানতে হলে তাঁদের ২০১৮ সালের বাস ভাড়া মেনে নিয়ে এখন বাস চালাতে হবে। কিন্তু এই ৫ বছরে জ্বালানীর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বেড়েছে বাসের নানা যন্ত্রাংশের দামও। এই খরচ ২০১৮ সালের ভাড়া দিয়ে তোলা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে বাস রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া ভিন্ন দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই। যার অর্থ বড়সড় ভোগান্তির মুখে পড়তে চলেছেন বাংলার আমজনতা।
আরও পড়ুন স্পর্শহীন আধারের সুবিধা, ঘরে বসেই Authentication
২০১৮ সালের পর বাস ও মিনিবাসের ভাড়ার আর কোনও তালিকা প্রকাশ করেনি রাজ্য সরকার। সেই ভাড়ার ক্ষেত্রে নূন্যতম ভাড়া ধার্য হয়েছিল বাসের জন্য ৭টাকা ও মিনিবাসের জন্য ৯টাকা। কিন্তু এখন বাসে পা রাখলেই গুণতে হচ্ছে ১০ টাকা ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১২টাকা। কোথাও কোথাও আবার সেই ভাড় ১৫ টাকাও নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্টেজে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন বাস মালিকেরা। ১৩ টাকার ভাড়া হয়ে গিয়েছে ২৬টাকা। অথচ ভোগান্তির ভয়ে, কেউ এই নিয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়েও অনেকে এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করেননি। ফলে বেসরকারি বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে লাগামছাড়া ভাড়া নেওয়া হচ্ছে রাজ্যজুড়েই। এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী প্রত্যুষ পাটোয়ারি। শুনানিতে তিনি দাবি করেন, রাজ্য মোটর ভেহিকেলস আইনের ৬৭ নম্বর ধারা অগ্রাহ্য করে যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এমনকি বাসে কোনও ভাড়ার চার্ট পর্যন্ত রাখা হচ্ছে না।
আরও পড়ুন স্বাস্থ্যসাথীর কামাল, ১৩৩১ কোটি টাকার চিকিৎসা পেয়েছেন বাংলার প্রবীণরা
সেই মামলার শুনানিতেই আদালত রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল, ২০১৮ সালের ভাড়া মেনে বাস-মিনিবাসে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে নাকি বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তার উত্তরে রাজ্য জানিয়েছিল, কোথাও বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। এমন কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে জমা পড়েনি। যদিও বাস্তবে রাস্তায় বার হয়ে বাস বা মিনিবাসে চড়লেই আমজনতা বেশ বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন বাসের ভাড়া ঠিক কোন হারে বেড়েছে। সেই মামলাতেই বুধবার কল্কাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়ে জানিয়েছে, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি কোনওভাবেই নেওয়া যাবে না। ২০১৮ সালে রাজ্য সরকার যে ভাড়া ঠিক করে দিয়েছিল আপাতত সেই ভাড়াই বহাল থাকবে। প্রতিটি বেসরকারি বাসে ওই তালিকা ঝোলাতে হবে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি বেসরকারি বাস ও মিনিবাসে ভাড়ার চার্ট ঝোলাতে হবে। এছাড়া, অভিযোগ জানানোর জন্য এলাকাভিত্তিক টোল ফ্রি ফোন প্রতিটি বাসের ভিতরে ও বাইরে লিখে রাখতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই রায়ের পরেও কী ভাড়া হয়রানি কমবে? বাস মালিকদের সংগঠন সূত্রে কিন্তু জানা গিয়েছে, তাঁরা আদালতের নির্দেশ মেনে বাস চালাতে পারবেন না। তাই রাস্তা থেকে বাস তুলে নেওয়া বা রাস্তায় বাস না নামানোর পথেই হাঁটা দিতে চলেছেন তাঁরা।