নিজস্ব প্রতিনিধি: কোভিডের(Covid) জন্য লকডাউন(Lockdown) পর্বে বেশ কয়েক মাস বন্ধ ছিল বাস চলাচল। পরে লকডাউন উঠলেও প্রায় ২ বছর ধাক্কা খেতে হয়েছে বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস পরিবহণ শিল্পকে(Private Passenger Bus Transport Industry)। এবার সেই কারণ দেখিয়ে রাজ্যের ৩টি বেসরকারি বাস সংগঠনের(Private Bus Owners Association) তরফে রাজ্যের পরিবহণ দফতরকে(West Bengal State Transport Department) অনুরোধ জানানো হল, যে সব বেসরকারি বাস লকডাউনের জন্য চলতে পারেনি তাদের বয়সের ভিত্তিতে বাতিল করার সিদ্ধান্ত দু’বছর করে পিছিয়ে দেওয়া হোক। ‘গণ পরিবহণ বাঁচাও কমিটি’ নাম দিয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এই দাবিপত্র জমা পড়েছে।
বাসমালিকদের সংগঠনের মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, যে বাসগুলি লকডাউনের জন্য চলতে পারেনি তাদের বয়সের ভিত্তিতে বাতিল দু’বছর করে পিছিয়ে দেওয়া হোক। কোভিড সংক্রমণের সময় যে লকডাউন হয়েছিল, তাতে ওই দুই বছর বাসগুলি রাস্তায় চলাচল করেনি। অথচ এমন অনেক বেসরকারি বাস রয়েছে, যাদের মেয়াদ কাল ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু লকডাউনের সময় দু’বছর বেসরকারি বাস রাস্তায় চলাচল না করায় বাসমালিকদের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে, তা ছাড়া বাসগুলি ওই দু’বছর না চলায় এখনই তা বাতিল করার জায়গায় নেই। একই সঙ্গে লকডাউনের সময়ে দুই বছর ধরে বাস বসে থাকায় বাস মালিকদের যে আর্থিক ধাক্কা সহ্য করতে হয়েছে, তাতে নতুন বাস নামানো অনেকটাই আর্থিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এখন। তাই বাতিল হতে চলা বাসের মেয়াদ দু’বছর বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। এখন ডিজেল চালিত বাস রাস্তায় নামাতে গেলে ৩০ লক্ষ টাকা লাগে খুব কম করেও। আর ইলেকট্রিক চালিত বাস কিনতে গেলে সেই বাসের দাম পড়তে পারে ৬০-৬৫ লক্ষ। সেই টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য এখন আর বাস মালিকদের নেই।
জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘বাসের বয়সের মেয়াদ বৃদ্ধির যে দাবি আমরা করেছি তা একেবারেই যুক্তিযুক্ত। ফিরহাদ হাকিম পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন আমরা এই দাবি তাঁর কাছেও রেখেছিলাম। তিনি বিষয়টি যথাসময়ে খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে বাসমালিকদের আবেদন কলকাতা হাইকোর্ট বা গ্রিন ট্রাইবুনাল শুনবে না। পরিবহণ দফতর যদি নিজের ইচ্ছায় বিষয়টি নিয়ে তাদের কাছে দরবার করেন, তা হলে অবশ্যই আমরা বাস চালানোর জন্য অতিরিক্ত সময় পেতেই পারি।’ তবে পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, বেসরকারি বাসমালিকদের এমন দাবি মানা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, ২০০৯ সালের ৩১ জুলাই কলকাতা হাইকোর্ট এক নির্দেশে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কলকাতা পুরনিগম এলাকায় ১৫ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ গাড়ি চালানো যাবে না। সঙ্গে গ্রিন ট্রাইবুনালের রায়েও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে। যার ফলে চলতি অর্থবর্ষে পরিবহণ দফতরের ১১ হাজার গাড়ি বাতিল হতে চলেছে। বেসরকারি বাস সংগঠনের ওই দাবি মেনে নেওয়ার অর্থ কলকাতা হাই কোর্টের রায়কে উপেক্ষা বা অবমাননা করা। তা ছাড়া মেয়াদ উত্তীর্ণ বাসগুলিকে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই পরিবহণ দফতরের কাছে।