নিজস্ব প্রতিনিধি: তিনি ছিলেন রাজ্যের অন্যতম দাপুটে নেতা ও মন্ত্রী। একাধিক দফতরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সফলভাবেই তিনি বিগত এক দশক ধরে সামলেছেন কখনও শিল্পবাণিজ্য দফতর, কখনও পরিষদীয় দফতর, তো কখনও শিক্ষাদফতর। ছিলেন রাজ্যের শাসক দলের মহাসচিবও। কিন্তু সেই তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়(Partha Chattopadhay) এখন জেলে। নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর ভাবমূর্তি এখন ভূলুন্ঠিত। দল তাঁকে সব পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। রাজ্য সরকার কেড়ে নিয়েছে মন্ত্রীত্ব। বিধানসভার সব কমিটি থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ। থাকার মধ্যে আছে শুধু বিধায়ক পদটি। এবার সেই অবস্থায় পার্থ’র শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও পৃথক তদন্ত শুরু পথে হাঁটা দিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী সিবিআই(CBI)। পার্থ’র পিএইচডি ডিগ্রি(PHD Degree) আসল বা নকল এবং কোন পথে তা এসেছে সেটাই খতিয়ে দেখতে চান তাঁরা।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্থ’র বিরুদ্ধে তদন্তে নামা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের ধারনা বাংলায় অর্থের বিনিময়ে পিএইচডি ডিগ্রি পাইয়ে দেওয়ার চক্রে খুলে বসেছিলেন পার্থ ও তাঁর সঙ্গীরা। সেই সব ডিগ্রির মধ্যে কিছু আসল ও কিছু নকল যা ওইসব ডিগ্রি প্রাপকেরাও জানেন না। কিন্তু সেই সব ডিগ্রির বলে কেউ উচ্চসরকারি পদে কেউ বা শিক্ষাক্ষেত্রে মোটা মাইনের চাকরি করছেন। এই চক্রকে ফাঁস করতে চাইছে সিবিআই। কেননা তাঁদের ধারনা মোটা টাকার বিনিময়ে ওইসব ভুয়ো বা আসল পিএইচডি ডিগ্রি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে এই রাজ্যের লক্ষাধিক মানুষকে। পার্থ’র ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার ছাড়া, আর কারা তাঁর পিএইচডি শেষ করানোয় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা দেখা শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের(North University) বর্তমান উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যের(Subiresh Bhattacharya) ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
‘ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি টু নলেজ ইকোনমি— দ্য রোল অব হিউম্যান রিসোর্স উইথ রেফারেন্স টু ইন্ডিয়া’ বিষয়ে পার্থ পিএইচডি পান ২০১৪ সালে। সন্দেহ, গবেষণার একাধিক ধাপের শর্ত পূরণ না করলেও পার্থকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। সে সময়ে যাঁরা কলকাঠি নাড়েন বলে অভিযোগ, তাঁদের কেউ নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত কিনা, সেটাও এখন দেখছে সিবিআই। চলতি সপ্তাহের বুধবার সুবীরেশকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তাঁর কাছ থেকে তদন্তকারীরা বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন। সেই সব নথি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু নথির প্রতিলিপি সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর আধিকারিকেরা। তার মধ্যে পার্থের পিএইচডি সংক্রান্ত নথিও রয়েছে। পিএইচডির জন্য জমা দেওয়া মার্কশিটের প্রতিলিপি থেকে শুরু করে ‘রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট’, ‘কোর্স ওয়ার্ক’-এর নথি, মূল গবেষণাপত্রের অংশ বিশেষের প্রতিলিপি নেওয়া হয়। সে সব নিয়ে উপাচার্য কী জানেন, তা-ও জানতে চাওয়া হয়।
২০১২ সালে ‘পিএইচ ডি’ করার জন্য ‘রিসার্চ এলিজিবিলিটি টেস্ট’ দেন পার্থ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের দাবি, ‘কোর্স ওয়ার্ক’-এর জন্য ৭৫ শতাংশ হাজিরা বাধ্যতামূলক থাকলেও, তিনি সাকুল্যে দু’দিন ক্লাস করেছিলেন। সে কথা তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন বলেও দাবি। পার্থকে ‘কোর্স ওয়ার্ক’-এর পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং তাঁর গবেষণাপত্র তৈরিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়ে উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এবং এক রেজিস্ট্রার সক্রিয় ভূমিকা নেন বলে অভিযোগ। কলকাতা থেকে সমন্বয়ের কাজ করেছিলেন প্রশাসনিক পদে থাকা কিছু কলেজ শিক্ষক। এদের সবাইকে খুঁজে বের করার পাশাপাশি এইরকম ভাবে আরও কত কত মানুষকে পিছনের দরজা দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে সেটাই এখন খতিয়ে দেখছে সিবিআই। একই সঙ্গে পার্থ’র বিরুদ্ধে এক গবেষক অভিযোগ তুলেছিলেন যে তাঁর গবেষণাপত্র টুকে পার্থ’র গবেষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। এখন ওই গবেষকের দাবিও খতিয়ে দেখছেন সিবিআই আধিকারিকেরা।