নিজস্ব প্রতিনিধি: মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা কাকে বলে সেটা বিজেপির(BJP) থেকে বেশি ভাল আর কেউ শেখাতে পারবে না। অন্তত এই ভারত ভূখণ্ডে। কিন্তু সেই মৃত্যু রাজনীতিতে বিজেপির পকেট বা ভোট ব্যাঙ্ক কতখানি ভরবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল উত্তর কলকাতার কাশিপুরের অর্জুন চৌরাসিয়ার(Arjun Chourasia) মৃত্যু। প্রথম থেকেই বিজেপির দাবি ছিল, তৃণমূলের(TMC) গুণ্ডারা অর্জুনকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah) তো আরও তিন কদম এগিয়ে একদিকে যেমন কোনওরকম তদন্তের আগেই যেমন জানিয়ে দেন অর্জুন খুন হয়েছে, তেমনি নিজেই সিবিআই তদন্ত দাবি করার পাশাপাশি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ঘটনার রিপোর্ট তলব করেন। অর্জুনের পরিবার সরাসরি তৃণমূলকে দোষারোপ না করলেও শনিবার বিকাল পর্যন্ত সিবিআই তদন্তের দাবিতে অনড় ছিল। কিন্তু ছবিটা বদলে গেল শনিবার রাতেই। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আলিপুরের কম্যান্ড হাসপাতালে(Command Hospital) অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহের ময়নাতদন্তের পর যে প্রাথমিক রিপোর্ট উঠে এসেছে সেখানে আত্মহত্যার সম্ভাবনার কথাই উঠে এসেছে। আর তার পরে পরেই অবস্থান বদল চৌরাসিয়া পরিবারের।
কম্যান্ড হাসপাতালে হওয়া অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহ ময়নাতদন্ত হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এই ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত ছিলেন কল্যাণী এইমস-এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং আরজি কর হাসপাতালের ফরেনসিক সায়েন্স বিভাগের প্রধানও। সেই সঙ্গে করা হয় ভিডিওগ্রাফিও। রাতে সেই ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও চলে আসে। সেখানেই জানানো হয়, অনুমান করা হচ্ছে যে অর্জুন আত্মহত্যাই করেছিলেন। খুনের কোনও ইঙ্গিত প্রাথমিক রিপোর্টে মেলেনি। অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন মেলেনি অর্জুনের দেহে। এর থেকে প্রাথমিক ভাবে খুনের কোনও প্রমাণ বা চিহ্ন মিলছে না। আর তার পরে পরেই গোটা ঘটনা থেকে বঙ্গ বিজেপির নেতারা নিজেদের দূরে সরিয়ে নিতে শুরু করে দিয়েছেন। কার্যত প্রথম থেকেই খুন বলে বেশি চেঁচিয়ে এখন বিজেপিরই মুখ পুড়ছে। তাঁরা যে মানুষের মৃত্যু নিয়ে কদর্য রাজনীতি শুরু করেছে সেটাই সামনে চলে এল। খোদ অমিত শাহও মাঠে নেমে দলের মুখ পোড়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারলেন না।
এদিকে অর্জুন আত্মহত্যাই করেছে, এমনটা ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে উঠে আসায় অবস্থান বদল করেছে চৌরাসিয়া পরিবারও। রবিবার সকালে অর্জুনের দাদা আনন্দকুমার চৌরাসিয়া জানিয়ে দেন, তাঁরা পুলিশি তদন্তেই আস্থা রাখছেন। সিবিআই তদন্ত তাঁরা আর চাইছেন না। এমনকি বিজেপির নেতারা যে তাঁদের সঙ্গে গত কাল রাত থেকেই দূরত্ব বাড়াতে শুরু করে দিয়েছেন সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর এই সব দেখে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, বিজেপি নিজের পায়ে নিজেই কুড়ল মারছে। কেন বাংলার মানুষ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সেটা না খুঁজে তাঁরা এখন মানুষের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে। সংগঠন শক্ত না করে, মানুষের কাছে না গিয়ে তাঁরা এখন হাতের সামনে যা পাচ্ছে তা নিয়েই চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিচ্ছে। তাতে লাভের থেকে দলের ক্ষতি বেশি হচ্ছে।