নিজস্ব প্রতিনিধি: রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেই বাংলার অগ্নিকন্যা হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। দেশের মধ্যেই তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি কংগ্রেস থেকে বেড়িয়ে একটি সফল রাজনৈতিক দলের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। তৃণমূল(TMC) নেত্রী থেকে তৃণমূলসুপ্রিমো। তাতেও থেমে যাননি, নতুন দলের জন্মের পরের ১৩ বছরের মধ্যেই তাঁকে বাংলার ক্ষমতায় এনেছেন। এহেন নেত্রী গর্জে উঠলে দিল্লির গদি তো কেঁপে উঠবেই। হয়েওছে তাই। ‘আবকে বার ২০০ পার’ বলে হাঁক দেওয়া বিজেপির(BJP) দৌড় বাংলায় থেমে গিয়েছে ৭৭ আসন পেয়েই। আর এবার থমকে দাঁড়াতে হল খোদ মোদি সরকারকেও(Modi Government)। মমতার প্রতিবাদ ও আপত্তির জেরেই এবার বিদ্যুৎ বিলে(Electric Bill) বড়সড় পরিবর্তন আনতে চলেছে মোদি সরকার।
সূত্রে জানা গিয়েছে, সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনে বিদ্যুৎ সংশোধনী আইন পাশ করাতে মরিয়া মোদি সরকার। দীর্ঘদিন ধরে এই বিল আটকে রয়েছে। কারণ একটাই। যে খসড়া আইন তৈরি হয়েছিল, তাতে প্রবল আপত্তি তুলেছিল বিভিন্ন রাজ্য। সেই আপত্তি ও প্রতিবাদে প্রথম সরব হয়েছিলেন বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, এই বিদ্যুৎ আইন চালু হলে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনে রাজ্যের যে ক্ষমতা ও অধিকার, সেটা খর্ব করে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে আঘাত করার চেষ্টা হয়েছে ওই বিলে। একইসঙ্গে ইচ্ছামতো যে কোনও সংস্থাকে রাজ্যে রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়ার প্রবণতাও বিপজ্জনক। সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতার এই দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। আর তাই শেষমেষ মমতার দাবি মেনে, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্স প্রথা রাজ্যের হাতেই রাখার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মোদি সরকার।
বিদ্যুৎ বন্টনের ক্ষেত্রে অনিয়ম, বিদ্যুৎ চুরি, বিদ্যুতের মাশুলবাবদ লোকসান এবং বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ যাতে একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে থাকে সেই ব্যবস্থা করার লক্ষ্য নিয়েছিল মোদি সরকার। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের প্রাদেশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ সরকারি সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরেই চরম অর্থসঙ্কটে ভুগছে। বণ্টন সংস্থাগুলির কাছে উৎপাদন কোম্পানিগুলির বিপুল অর্থ বকেয়া। যার পরিমাণ ভারতজুড়ে লক্ষ কোটি টাকার বেশি। ঠিক এরকমই সময় বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সংস্কার আনতে চেয়েছিল মোদি সরকার। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণে যে খসড়া বিল তৈরি হয়েছিল, সেখানে দেখা গিয়েছে, কোনও একটি জনপদে একাধিক বণ্টন সংস্থার কাজ করার সংস্থান রাখা হচ্ছে। এছাড়া আগে থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টন সংস্থার মধ্যেকার পেমেন্ট চুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রিম অর্থ জমা রাখতে হবে। আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি অর্থ মেটানো না হয়, তাহলে রাজ্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধও করে দেওয়া হবে। এই ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার। সেক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকাও কমিয়ে আনা হয়েছিল। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলি। সবথেকে সরব ছিলেন মমতা।
সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র এখন বিদ্যুৎ বিলে যে নতুন সংশোধনী আনছে তাতে বলা হচ্ছে, কোনও এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ বণ্টনকারী সংস্থাকে কাজ করতে দেওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্যই। যদিও সংশোধন করে নতুন যে বিল আসবে, সেটির পূর্ণাঙ্গ রূপ না দেখে বিরোধী রাজ্যগুলি এখনই কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাইছে না। সংশোধিত রূপ দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে, এই আইন রাজ্যগুলি মেনে নেবে কি না। তৃণমূল সূত্রেও জানা গিয়েছে, বিল পূর্ণাঙ্গ আকারে না দেখে তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। আর গায়ের জোরে যদি মোদি সরকার বিল পাশের চেষ্টা করে তাহলে তৃণমূল রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করবে।