নিজস্ব প্রতিনিধি: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট(ED) বা ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের(West Bengal Primary Education Board) প্রাক্তন সভাপতি তথা নদিয়া জেলার পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য(Manik Bhattacharya)। সেই সূত্রেই এবার ইডির নজরে এসেছে মানিকের ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্যের(Souvik Bhattacharya) সংস্থা। কেননা তদন্তে নেমে ইডির আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য মানিকবাবুর ছেলের সংস্থার সঙ্গে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। ইডি যেটা এখন জানতে চাইছে তা হল, রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি থাকাকালীন মানিকবাবু কি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তাঁর ছেলের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য করেছিলেন? চুক্তির বাইরেও কি কোনও আর্থিক লেনদেন হয়েছিল? আর সেই সূত্রেই ইডির তরফে শৌভিককে জিজ্ঞাসাবাদ করার তোড়জোড় চলছে। পাশাপাশি ওই কোম্পানি বা সংস্থার আয়ব্যয় সংক্রান্ত নথি বিশ্লেষণ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন ইডির আধিকারিকেরা।
মানিকবাবুর ছেলে শৌভিকের নামে একটি কনসালটেন্সি ফার্ম রয়েছে। সেই ফার্মের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা মিলেছে আগেই। ইডির দাবি, ওই সংস্থার সঙ্গে ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজেস অ্যাসোসিয়েশন’-এর চুক্তি হয় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য। সেই মতো ৫৩০টি বিএ বিএড এবং বিএসসি বিএড কলেজ ৫০ হাজার টাকা করে পাঠায় ওই কোম্পানির অ্যাকাউন্টে। প্রতিটি কলেজ এই টাকা জমা দিলেও কোনও পরিষেবা দেওয়া হয়নি বলে দাবি ইডি আধিকারিকদের। এখন তাই ইডির তদন্তকারীদের প্রশ্ন, কেন মানিকের ছেলের সংস্থার সঙ্গেই চুক্তি করতে রাজি হল শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলি? যে ধরনের প্রযুক্তি পরিকাঠামো দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তার জন্য উপযুক্ত কোনও শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান তখন এ রাজ্যে ছিল না। শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত থাকার সুবাদে মানিকবাবু জানতেন, কী ধরনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দরকার। সেই সুযোগ নিয়েই ছেলের নামে কোম্পানি খুলে ফেলেন মানিকবাবু। পুরো বিষয়টি দেখভাল করতেন মানিকবাবু নিজেই। এরপর নিজের পদ ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ওই কোম্পানির সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য করা হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতেই এবার ইডির তরফে ওই ৫৩০টি কলেজের কর্তাকে একে একে ডেকে পাঠানো হবে। চুক্তির বিষয়ে মানিকবাবু কোনও নির্দেশ দিয়েছিলেন কি না, তাও তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হবে। চুক্তির সময় ওই কোম্পানি কী কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, টাকা জমা দেওয়ার পরেও কোনও কাজ না হওয়ায় তাঁদের তরফে কিছু বলা হয়েছিল কি না—এসব প্রশ্ন করা হবে কলেজগুলির কর্তৃপক্ষকে। শৌভিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আগেই ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকার হদিশ মিলেছে। ২০১৮ সালে বেঙ্গল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের থেকে নেওয়া হয় টাকা। মানিকের পরিবারের সদস্যদের বেনামে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা আছে। মানিকের কম্পিউটারের ২টি ফোল্ডারে ৬১ জনের নাম পাওয়া গেছে। ৬১ জনের মধ্যে ৫৫ জনের থেকে চাকরির জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে। যাঁরা ঘুষ দিয়েছে, তাঁরাই চাকরি পেয়েছে, এমন বিস্ফোরক অভিযোগও উঠেছে।