নিজস্ব প্রতিনিধি: ছিঃ এ কেমন আরাধনা! দেবী দুর্গা (DURGA) নিধন করছেন না মহিষাসুরকে। বধ করা হচ্ছে জাতির জনককে! রুবি পার্কে হিন্দু মহাসভার এই পুজোকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এ কেমন পুজোর রাজনীতি!
সপ্তমীর সন্ধ্যায় ভাইরাল হয়েছে এই ছবি। উল্লেখ্য, এবারে সপ্তমী পড়েছিল ২ অক্টোবর। গান্ধিজি’র (MAHATMA GANDHI) জন্মদিবস। সেই দিনেই দেখা গিয়েছে পুজো উদ্যোক্তাদের ‘আসল মনোভাব’। আর তারপর থেকেই বইছে তীব্র সমালোচনার ঝড়। অসুরের বদলে দেবীর পায়ের কাছে আছেন জাতির জনক মহত্মা গান্ধি! বধ হচ্ছেন তিনি! স্বাধীন ভারতে এ কেমন থিম পুজো!
হিন্দু মহাসভার বড় আদরের বিজেপি। এর আগে আরএসএসের বিভিন্ন কার্যকলাপে ফুটে উঠেছিল ‘গান্ধিজির প্রতি মনোভাব’। কোথাও আবার গান্ধি প্রতিকৃতিতে করা হয়েছিল গুলি। আবার তাদেরই ‘ঘনিষ্ঠ’ বিজেপি, স্বচ্ছ ভারতের প্রচার চালায় ‘গান্ধি চশমা’ ব্যবহার করে!
জনতা জনার্দনের ক্ষোভ উগরে ওঠার পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা। গান্ধিজির চশমা খুলে, মাথায় চুল পরিয়ে ‘সত্যি অসুর’ বানানোর চেষ্টা করেছেন আয়োজকরা। পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা বলছেন, ওপর মহলের চাপে বদলাতে হল গান্ধিজির চেহারা। আর বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, এমন হয়ে থাকলে তা ঠিক নয়।
জানা গিয়েছে, একাধিক রাজনৈতিক মহল সহ হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সংগঠন থেকে সাধারণ মানুষ ওই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হবে। নেট দুনিয়ায় কটাক্ষ, ‘ওঁদের জনক গডসে’।
এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক এবং কবি অংশুমান কর ‘গান্ধী’ শিরোনামে কবিতা লিখেছেন,
“সব কিছু তাঁর মেনে নিই তা তো নয়
ছিল কিছু ভুল, যেমন সবারই থাকে
কিন্তু আবার সকলের মতো নন
শান্তিকামীরা তাই তাঁকে মনে রাখে
বৃক্ষর মতো ছিলেন দাঁড়িয়ে একা
ছোটো ছোটো গাছ যখন ঝড়েতে কাত
যেখানে মানুষ কাঁদছে সেখানে তিনি
দাঙ্গা থামাতে ঘুম নেই কত রাত
উপমহাদেশ কীভাবে সারাবে রোগ
যত ভেবেছেন একা হয়েছেন তত
কিন্তু তবুও কোনওদিন কক্ষনো
করেননি ত্যাগ হিংসাহীনের ব্রত
সেই মানুষকে অসুর সাজাবে তুমি?
সাজাবে অশুভ, রাঙাবে রক্ত-রণে?
শোনো দুর্জন, মানছি না এই খেলা
এক-দুই করে দাঁড়াব লক্ষ জনে
বাংলার মাটি, বাংলার জল
বাংলার ঘর, বাংলার হাট
বাংলার বন, বাংলার মাঠ
ভরে দেব আজ গর্জনে গর্জনে!”