নিজস্ব প্রতিনিধি: ব্রিগেডের ময়দানে বামমঞ্চে দাঁড়িয়েই নতুন করে ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা ভাগের দাবি তুলেছিল যে সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলটি, তার সঙ্গে রাজনৈতিক স্তরে জোট গড়ে তুলতে প্রথম থেকেই তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছিল কংগ্রেস(INC)। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই ব্রিগেড সভা থেকেই অধীররঞ্জন চৌধুরী(Adhir Ranjan Chowdhury) বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার(Bengal) মাটিতে তৃণমূল(TMC) বিরোধিতায় তাঁরা বামেদের(Left) পাশে থাকলেও আইএসএফের(ISF) সঙ্গে কোনও জোট তাঁরা গড়বেন না। এমনকি কোনও আসন সমঝোতাতেও তাঁরা যাবেন না। হয়েওছিল তাই। কংগ্রেস বাম শিবিরকে যে আসন ছেড়েছিল তার থেকেই বামেরা আসন ছেড়েছিল আইএসএফকে। সেই নির্বাচনে বাংলার বিধানসভা থেকে বাম ও কংগ্রেস ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেলেও জিতেছেন আইএসএফ’র একমাত্র বিধায়ক নৌসাদ সিদ্দিকি(Nowshad Siddiqui)। কংগ্রেসের সঙ্গে নৌসাদ ও তাঁদের দল আইএসএফের সম্পর্ক তৈরি না হলেও বামেদের সঙ্গে তাঁদের বেশ মাখোমাখো সম্পর্ক। এবার সেই সম্পর্কই কাঁটা হয়ে উঠেছে বাংলার বুকে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে। যা পরিস্থিতি তাতে দুই দলের জোট ভেঙে যেতেও পারে।
শুধু নন অধীর চৌধুরী, কার্যত গোটা কংগ্রেস শিবিরই বামেদের নৌসাদ প্রীতিতে রীতিমত ক্ষুব্ধ। নৌসাদরা দেশের বিজেপি বিরোধী জোট INDIA-তে যোগ দিতে চাইলেও কংগ্রেস সহ একাধিক রাজনৈতিক দল তাতে আপত্তি জানাতে এই জোটের দরজা খুলছে না আইএসএফের জন্য। কিন্তু বামেরা এখন তাঁদের এই বাংলার বুকে বেশ কিছু লোকসভা কেন্দ্র ছেড়ে দিতে চাইছে আগামী সাধারন নির্বাচনে লড়াই করার সুযোগ করে দিতে। আর এখানেই তীব্র আপত্তি কংগ্রেসের। বামেদের এই নৌসাদ প্রীতি তথা আইএসএফ ভজনা না বন্ধ হলে তাঁরা বাংলার মাটিতে বামেদের সঙ্গে জোট ভাঙতে বিন্দুমাত্র পিছু পা হবে না। প্রয়োজনে বাংলায় কংগ্রেস একাই লড়বে। এই সিদ্ধান্ত কার্যত নেওয়া হয়েই গিয়েছে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব ও প্রদেশ কংগ্রেস স্তরে। অন্তত সূত্রের তেমনটাই দাবি। বামেদের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের সখ্যতা দীর্ঘদিনের। সেটা কারওরই অজানা নয়। সেই সখ্যতার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) কংগ্রেস ত্যাগ ও তৃণমূলের গঠন। বাকিটা ইতিহাস। ২০১৬ সালেও মমতা ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে বামেদের সঙ্গে জোট গড়েই লড়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এবার কাঁটা আইএসএফ। যা পরিস্থিতি বামেরা নৌসাদ ও আইএসএফের হাত না ছাড়লে কংগ্রেস একাই লড়বে বাংলায়।
কিন্তু নৌসাদ ও আইএসএফ-কে নিয়ে কংগ্রেসের আপত্তি ঠিক কোথায়? হয়দরাবাদের AIMIM দলের মাথা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি কার্যত বিজেপির হাতে তামাক খেয়ে চলেছেন বলে বার বার অভিযোগ তুলছে দেশের একাধিক বিজেপি বিরোধী দল। তার মধ্যে যেমন কংগ্রেস, তৃণমূল, আরজেডি আছে তেমনি আছে সপা, টিআরএস এবং আপ। কেননা AIMIM দীর্ঘদিন ধরেই হয়দরাবাদ কেন্দ্রীক খুবজোর অন্ধ্রকেন্দ্রীক রাজনীতি করে এসেছে। কিন্তু কোভিডের পর থেকেই দেখা যাচ্ছে, এই দলের রাজনৈতিক বিস্তারের দোহাই দিয়ে ওয়াইসি সেই সব রাজ্যের ভোটে প্রার্থী দিতে শুরু করেছেন যেখানে বিজেপি বা এনডিএ জোট ক্ষমতায় আছে। যেহেতু AIMIM’র ভোটব্যাঙ্ক হল সংখ্যালঘুরা, তাই বিজেপি বা এনডিএ শাসিত রাজ্যে প্রার্থী দেওয়ায় সেখানে এই সংখ্যালঘু ভোট বিজেপি বিরোধী সেখানকার প্রধান রাজনৈতিক দল বা জোট এবং ওয়াইসির দলের মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছিল। এতে বিজেপির সুবিধা হচ্ছিল। আর তা দেখেই বিজেপি বিরোধী দলগুলি একযোগে ওয়াইসি ও তার দলকে বিজেপির বি-টিম বলে চিহ্নিত করেছে।
বাংলার বুকে ঠিক সেই একই কায়দায়, নৌশাদরা আইএসএফ দলটিকে বানিয়েছেন এখানকার সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ভাগ করে বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতে। সেটা কার্যত জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এখন তো কেন্দ্র সরকার নৌসাদকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তাও দিচ্ছে। আর থেকে থেকেই নৌসাদের গলায় বিজেপির সুর শোনা যাচ্ছে। এই কারণেই কংগ্রেস নৌসাদ ও আইএসএফের সঙ্গে কোনও জোট গড়তে চাইছে না। প্রয়োজনে বামেদের সঙ্গেও জোট ভাঙতে তাঁরা পিছু পা হবে না বলেই সূত্রে জানা গিয়েছে। বামেরা যদি নৌসাদ ও আইএসএফকে আঁকড়ে ধরে চলতে চায়, তাহলে এ রাজ্যে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একাই লড়াই করবে।