নিজস্ব প্রতিনিধি: জন্ম ১৯১৪ সালে আজকের দিনে। তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই সেও প্রায় এক যুগ পার হয়ে গিয়েছে। তবুও তাঁর শূন্যস্থান আজও অপূরণ হয়েই থেকে গিয়েছে। কিবা বাংলায়, কিবা দেশে। আর এখানেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে জ্যোতি বসু(Jyoti Bose) আজও অমলীন। তাঁর মৃত্যুর একযুগ পরেও তাঁর মতো কোনও বামপন্থী(Leftish) নেতা আর উঠে এলেন না বাংলা(Bengal) বা দেশের(India) রাজনীতিতে। অথচ দেশের এই চরম সঙ্কটকালে তাঁর মতো একজন বামপন্থী মানুষকেই সব থেকে বেশি প্রয়োজন ছিল। শুক্রবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী(Chief Minister) জ্যোতি বসুর ১০৯তম জন্মদিন। বামেরা জন্মদিন উদযাপনে বিশ্বাসী নন। তাই বড় কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে না কোথাও। তবে নিজেদের মতো করে ছোট ছোট আলোচনা সভা, স্মরণ সভার মধ্যে দিয়ে জ্যোতিচর্চায় মন দিয়েছেন বামেরা।
জ্যোতি বসু ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাও একদফার নয়, ৫ দফার। ১৯৭৭ থেকে ২০০০। টানা ২৩ বছর। সৌভাগ্য তাঁর তাঁকে বাংলায় বাম শাসনের অবসান দেখে যেতে হয়নি। বাংলায় গ্রামীণ এলাকায় বামেদের সমর্থনের মূল ভিত্তি ছিল কৃষকেরা। ‘লাঙল যার, জমি তাঁর’ এই বাম তত্ত্বের রূপায়ণ জ্যোতিবাবুর আমলেই সব থেকে বেশি হয়েছিল বাংলায়। বার্গাদার প্রথার রূপায়ণ, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার প্রবর্তন, গ্রামীণ এলাকায় তপশিলী জাতি ও উপজাতির মানুষদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান, এই সব কিছুই ঘটেছে জ্যোতিবাবুর মুখ্যমন্ত্রীত্বকালে। সিপিআই ভেঙে সিপিআই (এম) হওয়া, সেখানেও জড়িয়ে আছেন জ্যোতিবাবু। দল তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করতে চায়নি এটা অবশ্য ‘ঐতিহাসিক ভুল’। তবে ভুললে চলবে না আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) যখন বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন তখনও মহাকরণে গিয়ে জ্যোতিবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে এসেছিলেন। বামেদের সঙ্গে মমতার বিরোধ চিরন্তন। এমনকি তাঁর আমলেই ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানে গুলি চলেছিল। তাঁর আমলেই বার বার মমতার ওপর আঘাত হেনেছিল সিপিএমের পোষা হার্মাদরা। তবুও জ্যোতি অমলীন।
জ্যোতিবাবু বামপন্থী হলেও তাঁর সঙ্গে সখ্যতা ছিল দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের। কিন্তু এটাও সত্যি জ্যোতিবাবুর জীবিত অবস্থাতেই বাংলার বুকে বাম শিবিরে জং ধরেছিল সব থেকে বেশি। অনেকেরই অভিমত জ্যোতিবাবু ক্ষমতায় থাকলে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম হত না। কারণ জ্যোতিবাবু মাটির সঙ্গে কৃষকদের নাড়ির যোগ বুঝতেন। গ্রাম বাংলায় কৃষকের হাতে থাকা জমির পরিমাণ, গোয়ালের গরু, ভিটের পাশের পুকুর কী আর্থসামাজিক গুরুত্ব বহণ করে তা তিনি বুঝতেন। তাই কৃষকদের হাত থেকে জোর করে জমি ছিনিয়ে নেওয়ার পথে নিজের সরকার বা দলকে জেতে দেননি। তাতে হয়তো বাংলায় শিল্প হয়নি ঠিকই, কিন্তু বাম সরকারের পতনও ঘটেনি। এদিন জ্যোতিবাবুর জন্মদিনের রাজ্য বিধানসভায় তাঁর স্মরণসভা পালিত হয়েছে কোনও বাম বিধায়কের উপস্থিতি ছাড়াই। জ্যোতিবাবু ভাগ্যবান তাঁকে এইদিন দেখে যেতে হয়নি।
এদিন রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জ্যোতিবাবুর সম্পর্কে জানিয়েছেন, ‘আমাদের সঙ্গে সিপিএমের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল, আছেও। কিন্তু সেই দলের কোনও প্রতিনিধি রাজ্য বিধানসভায় নেই, এটা ভালো লাগে না। জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই ২১শে জুলাইয়ে পুলিশের গুলিচালনায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেদিন ওই গুলি চালনার ঘটনা না ঘটলেই ভালো হত।’ ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও আমরা গুণী মানুষদের শ্রদ্ধা জানাই। এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি। অটলবিহারী বাজপেয়ী জীবিত থাকাকালীনই বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়। তার পরেই জ্যোতিবাবু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর সামনেই বলেছিলেন, বিজেপি একটা অসভ্য, বর্বর দল। জ্যোতিবাবু ঠিকই বলেছিলেন।’