নিজস্ব প্রতিনিধি: অজন্তা ক্ষত এখনও শুকায়নি। তারমধ্যেই আবারও ধাক্কা এসেছে বাম শিবিরে। প্রয়াত বামনেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর মেয়ে বসুন্ধরা গোস্বামী কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। এই ঘটনা বাম শিবিরে যতটা না ধাক্কা তার থেকে ঢের বেশি অস্বস্তিদায়ক। কেননা অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাস তৃণমূলের মুখপত্র জাগো বাংলায় ‘বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি’ শীর্ষক প্রবন্ধ লিখে ও তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়ষী প্রশংসা করে আলিমুদ্দিনের বিষনজরে পড়েছিলেন। তাঁকে দলের তরফে চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন তাঁকে সাসপেন্ড করা হবে না। সেই সময় ক্ষিতি কন্যা বসুন্ধরা প্রকাশ্যেই কলম ধরেছিলেন অজন্তার পক্ষে। সেই বসুন্ধরাকেই তথাকথিত বাম প্রভাবিত যাদবপুর এলাকার ৯৬ নম্বর ওয়ার্ড যা এবারে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে সেখানকার প্রার্থী করে তৃণমূল কার্যত বাম শিবিরকেই কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। ঘরের মেয়ে দলেরই বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে যাওয়ায় এখন প্রবল অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে লাল শিবির।
বঙ্গের বামনেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁদের শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করলেও রাজ্য তথা দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতা থেকে ওয়াকিবহাল মহল ম মতাকে বাম অপেক্ষা বেশি বামমনোভাবাপন্ন বলেই মনে করেন। সেই মমতার সঙ্গেই কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষিতি পরিবারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আর সেটা মমতার বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন সময় থেকেই। পরিবর্তনের পরে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রয়াত হন আরএসপি নেতা ক্ষিতি গোস্বামী। তার পরই বসুন্ধরা তৃণমূলে যোগ দেন। পেশায় মনস্তত্ত্ববিদ বসুন্ধরা অবশ্য কোনও দিনই সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। বামফ্রন্টের সঙ্গেও যুক্ত থাকেননি কোনওদিনই। তবে বাম নেতার মেয়ে হওয়ায় তাঁকে বাম নেতারা ঘরের মেয়ে হিসাবেই দেখতেন। তবে তৃণমূলে যোগ দিলেও খুব একটা মাঠে ময়দানে নেমে রাজনীতি করতে বসুন্ধরাকে দেখা যায়নি। সেই বসুন্ধরাই হঠাৎ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন গত অগস্টে আর সেটাও অজন্তা বিশ্বাসের কারনে।
অজন্তার পক্ষে নেমে বসুন্ধরা সেই সময় লিখেছিলেন, ‘এটা বাস্তব যে বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি নিয়ে কোনও লেখা হলে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া সম্পূর্ণ হতে পারে না। অজন্তা এটা লিখে কোনও ভুল করেননি। লেখায় বামপন্থীদের অংশ অটুট রেখে অজন্তা উদারতার পরিচয় দিয়েছেন। এ নিয়ে অজন্তাকে সিপিএমের আক্রমণ দেখে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি ওরা স্টালিনিস্ট দল। ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। ওরা কন্ঠরোধ করে।…. সিপিএমের এইসব আচরণ বহু প্রতিভাকে বামফ্রন্টের স্রোত থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে। ওরা সবেতে চক্রান্তের গন্ধ দেখে। বদনাম করে। তারপরে শাস্তির পথে যায়। এই খেলা মানুষ ধরে ফেলেছেন। প্রকৃত বাম মনোভাবাপন্ন মানুষ কোনও অবস্থায় এটা মানবেন না। এই করতে করতে বামফ্রন্টকে সব দিক থেকে শূন্যে নামিয়েছে সিপিএম। তাতেও শিক্ষা হয়নি। অনুশাসনের নামে কুপমুণ্ডুকের রাজনীতি করতে ব্যস্ত। চিন্তাভাবনাকে জনমুখী সময়োপযোগী করার কোনও চেষ্টা সিপিএমের নেই।’ বসুন্ধারার এই লেখাই সিপিএমের কাছে গলার কাঁটা হয়ে ঝুলে গিয়েছিল। আর এবার তো সেই বসুন্ধরা সরাসরি ভোট ময়দানে। তাও এককালের বাম দুর্গে। স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তি বেড়েছে আলিমুদ্দিনের নেতাদের।