নিজস্ব প্রতিনিধি: কেউ আশা রাখেননি। কোনও সমীক্ষাতেই তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু ভোট শেষে তাঁরাই দিলেন সব থেকে বড় চমক। শুধু যে দিলেন তাই নয়, নিজেরাও চমকে গেলেন। কেননা তাঁরা জানতে পেরেছেন, আদতে ফলাফলই বলে দিচ্ছে, এলাকায় চিহ্নিত বাম ভোটাদের বাইরে থাকা জনতার একাংশের সমর্থন পেয়েছেন তাঁরা। আর তার জেরেই লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের নিরিখে শহর কলকাতায় বেড়েছে বাম ভোট। কার্যত এই ছবি বলে দিচ্ছে, কলকাতার বাসিন্দারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের বিরোধীতায় বামেদের ওপরেই আস্থা রেখেছেন বেশি করে। ঠিক যেভাবে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঠেকাতে বহু বামপন্থীই ভরসা রেখেছিলেন মমতা ও তৃণমূলের ওপরে। পুরভোটের ফল বলছে এবারের নির্বাচনে বামেদের ভোট ৭.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সিপিআই(এম) একাই পেয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ ভোট। সার্বিকভাবে বামফ্রন্ট পেয়েছে ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট। আর এটাই কিন্তু বলে দিচ্ছে আগামী দিনে বাংলা জুড়ে বামেদের ঝুলি ফের ভরে উঠতে চলেছে আমজনতার ভোটে।
বাম নেতারা এখন জোর গলায় বলছেন, এবারের নির্বাচনে তাঁরা শুধু বামপন্থীদের ভোট পেয়েছেন তাই নয়, যারা বামপন্থী নন তাঁদেরও ভোট পেয়েছেন। যে সব বাম ভোটাররা রামের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন তাঁদেরও একাংশ এবার বাম শিবিরে ফিরেছেন। আর সেটাই কার্যত বঙ্গ রাজনীতিতে বামেদের ফের ঘুরে দাঁড়ানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে দিচ্ছে। বাম নেতাদের দাবি, এবারের পুরনির্বাচনে তাঁরা তাঁদের ইস্তেহারে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরেছিলেন যা দেখে শহরের একটা বড় অংশের বাসিন্দাই তাঁদের সমর্থন করার কথা কার্যত ঠিক করেই নিয়েছিলেন। বহু ওয়ার্ডে যাঁরা চিহ্নিত বামপন্থী তাঁদের আগেই নরমগরমে ভোট দিতে না যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। বহু বুথে এজেন্ট না থাকায় একতরফা ভোটও হয়েছে। বুথ দখল করে ছাপ্পাও হয়েছে। কিন্তু যারা চিহ্নিত বাম ভোটার নয়, তাঁরা নির্বিঘ্নেই ভোট দিতে পেরেছেন। এরা মুখে বলেছেন চুপচাপ ফুলে ছাপ। আদতে ভোট দিয়েছেন কাস্তে হাতুড়ি তারায়।
বাম নেতাদের আরও দাবি, গত লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিরোধীতা করতে গিয়ে যারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন তাঁদেরও একটা অংশ এবারে বামেদের ভোট দিয়েছেন। এর সঙ্গে যদি বামদের চিহ্নিত ভোটারদের সবাই যদি ভোট দিতে পারতেন তা হলে শতাংশের নিরিখে বামেদের ভোট আরও বাড়ত। এই বিষয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাকদমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘পরিচিত বামপন্থী পরিবার ছাড়াও রাজনীতির সঙ্গে প্রকাশ্য সরাসরি যুক্ত নয় এমন অংশের মানুষের সমর্থন এসেছে। কেন এসেছে, কোন আশা নিয়ে এসেছে সেটা ভাবার সময় এসে গিয়েছে। আমরাও ভাববো, তৃণমূলও ভাবুক।’