নিজস্ব প্রতিনিধি: সুব্রত মুখোপাধ্যায় শুধু রাজ্যের বর্ষীয়ান মন্ত্রীই ছিলেন না। ছিলেন রাজ্য রাজনীতির এক অধ্যায়। সেই অধ্যায়ে দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে কালীপুজোর রাতে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের এই আকস্মিক প্রয়াণ এখনও মন থেকে রাজ্য রাজনীতির কারিগরেরা মেনে নিতে পারেননি। সুব্রতবাবুর শূণ্যস্থান তাঁদের এখনও ব্যাথায় কাতর করে চলেছে। সেটাই এদিন সামনে এল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় ও রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের চোখের জলে।
সোমবার দুপুরে রাজ্য বিধানসভায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানেই বন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বলেন, ‘সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। তারপর ছাত্র আন্দোলন থেকে পথ চলতে চলতে এতগুলো বছর কেটেছে। কত ঝগড়া করেছি, তার হিসাব নেই। আবার কত নিবিড় বন্ধুত্বও ছিল। আজ যে সুব্রত নেই, ভাবতেই পারছি না। পুজোর আগেই শেষ ক্যাবিনেট বৈঠক হল বিধানসভায়। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে আমার ঘরে এল সুব্রত। বলল তোর সঙ্গে একা আডডা দিতে চাই। ঘর খালি করে দেওয়া হল। সবাই চলে যেতেই বলল, এখন তো আমার সমবয়সী বলতে তুই। তোকেই সব বলতে পারি। এ সব কথা তো আর ছন্দবাণীকেও বলা যায় না। সুব্রত বরাবরই হুজুগে ছিল। বাম আমলে বহুবার আক্রান্ত হয়েছিল সুব্রত। বহুবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন তিনি। আমাদের মধ্যেও অনেক ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু, আমি সুব্রতকে ছাড়িনি, সুব্রত আমাকে ছাড়েনি। এমন একজন বন্ধুকে হারানো যে কতটা দুঃখের, তা বলে বোঝানো যাবে না।’ এরপরেই বিধানসভা অধিবেশন কক্ষেই কেঁদে ফেলেন তিনি।
অন্যদিকে বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান প্রদানের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও আবেগ তাড়িত কন্ঠে সুব্রতবাবুর শূন্যতা সবার সামনে তুলে ধরেন। বলেন, ‘আমার আজ খুব খারাপ লাগছে। প্রতিবছর সুব্রতদা থাকেন। এই বছরই তিনি আর নেই। সুব্রতদার সঙ্গে কথা হতো পুজো নিয়ে। তখনই বলতেন, আমি থিম পুজো করি না। আমি করি সাবেকি পুজো। হঠাৎ করে সেই সুব্রতদা চলে গেলেন। তবে এখনও তো ওঁর মৃত্যুর বয়স হয়নি। এই শোক মানতে পারছি না। পুজো আসবে, আমরা সবাই থাকব। শুধু থাকবেন না সুব্রতদা। তবে চিরকাল সুব্রতদা আমাদের কাছে এভারগ্রিন হয়েই থাকবেন। জীবনে এত মৃত্যু দেখেছি। কিন্তু, সুব্রতদার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছি না। আলোর দিনে এত বড় অন্ধকার ভাবতে পারিনি।’
এদিন বিধানসভায় সুব্রতবাবুকে নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘কোনওদিন উত্তম কুমারকে দেখিনি। ছোট বেলায় যখন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে দেখতাম, তাঁকেই উত্তম কুমার মনে হতো। দূর থেকে দেখতাম। তাঁর মৃত্যু এক বড় বিপর্যয়। যতদিন সংসদীয় রাজনীতি থাকবে ততদিন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করা হবে।’ মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘১৯৭১ থেকে ২০২১ সালের বঙ্গ রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করলে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ছাড়া কোনও আলোচনা সম্ভব নয়। তাঁকে এক সময় তরমুজ আখ্যা দেওয়া হয়, খুব বেদনার। সুব্রতদা বলতেন, সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধী পক্ষের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মানুষের কথা বলতেই হবে।’ বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আমার এবং আমার পরিবারের সম্পর্ক ছিল। অনেক ছোট বয়সে আমি তাঁকে দেখেছি। মেদিনীপুরের বাড়িতে তিনি শতাধিকবার এসেছেন, থেকেছেন। তাঁর সঙ্গে রাজনীতির বাইরে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। রাজনীতির মত আলাদা হলেও কোনও দিন সেই সম্পর্কে প্রভাব পড়েনি। বাংলার রাজনীতিতে সুব্রত মুখ্যপাধ্যায় প্রাসঙ্গিক থাকবেন।’