নিজস্ব প্রতিনিধি: ছিল একসময় তাঁর গড়। সেই গড়ের ভরসাতেই দল বদলের ঝুঁকি নিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিনের দল ছেড়ে নাম লিখিয়েছিলেন কেন্দ্রের শাসক দলের। তার জেরে জুটেছিল লোকসভায় লড়াই করার দলীয় টিকিটও। জিতেও যান। বিধায়ক, পুরপ্রধানের পর হন প্রথমবারের জন্য সাংসদও। কিন্তু সেই সাংসদ হওয়ার পর থেকেই যাবতীয় বিপত্তি। রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে সংঘাত ক্রমশই বেড়ে যেতে শুরু করল। পাশ থেকে সরে যেতে শুরু করলেই দীর্ঘদিনের অনুগামী থেকে আমজনতাও। প্রথমে বেশ কিছু পুরসভা হাতে চলে এসেছিল। কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি সেই সব পুরসভা। এমনকি তাঁর খাস তালুক ভাটপাড়া পুরসভাও চলে যায় তাঁর হাতের বাইরে। একুশের বিধানসভায় এসেছে আরও বড় ধাক্কা। তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের ৭টির মধ্যে ৬টি বিধানসভাতেই ফুটেছে ঘাসফুল। ঝরে গিয়েছে পদ্ম। এখন তিনি শুধুই সাংসদ। ব্যারাকপুরের, বিজেপির। তিনি অর্জুন সিং। এবার তাঁকে টাইট দেওয়ার দাওয়াই বাতলে দিলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বসেছিল রাজ্যের উচ্চপ্রশাসনিক স্তরের বৈঠক। সেখানেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকার আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়েন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের প্রধান মনোজ ভার্মা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই ক্রমাগত গোলমাল চলছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট এলাকায়। তবে গত ২৩ জানুয়ারি ভাটপাড়ায় নেতাজির মূর্তিতে আগে মাল্যদানকে ঘিরে যেভাবে প্রকাশ্যে গুলি চালনার ঘটনা ঘটে তা রাজ্যের সব মহলেই প্রবল উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছিল। সেই ঘটনার জেরেই এদিন মনোজ ভার্মাকে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের বৈঠক থেকে অর্জুন সিংয়ের নাম না করেই মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন ভার্মাকে। সেই সময়েই তিনি কীভাবে পরিস্থিতি কড়া হাতে সামলাতে হবে সেটাও বাতলে দেন।
এদিন এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মনোজের ওখানে দু-তিনটে ঘটনা পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হয়েছে। বাইরে থেকে ক্রিমিনাল আমদানি করা হচ্ছে। তুমি সিআইডি এবং এসটিএফের সাহায্য নাও। কলকাতা পুলিশও মনোজকে সাহায্য করবে। ডিজি মালব্যও সাহায্য করবে। কারণ, ওখানকার ক্রিমিনাল চক্রটাকে ধরা দরকার। যারা বাইরে থেকে অর্ডার দিয়ে অস্ত্র আনিয়ে আমার রাজ্যে গন্ডগোল করার চেষ্টা করে, তাদের আমি তাদের ছাড়ব না। শুধু অ্যারেস্ট করলেই হবে না! পিছনে কারা? আজকালকার দিনে দু’হাজার টাকা দিয়ে বলছে, খুন করে চলে এসো। পিছনে কে, টাকাটা দিল কে? পিছন দিকে কে আছে সেটা ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। তুমি ইনভেস্টিগেশন করেছ ‘এ’ থেকে। কিন্তু তোমাকে যেতে হবে ‘জেড’ পর্যন্ত। এ জন্যই বলছি তুমি এসটিএফ, সিআইডি ও কলকাতা পুলিশে বিনীতের (কলকাতার পুলিশ কমিশার বিনীত গোয়েল) সাহায্য নাও।’