নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ শনিবার, সরস্বতী পুজো। এদিন সকাল থেকেই গৃহস্থের বাড়িতে বাড়িতে, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, ব্যাঙ্কে, সংবাদমাধ্যমে ও নানা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাগদেবীর আরাধনা শুরু হয়েছে। দেশবাসীকে এদিন সরস্বতী পুজো উপলক্ষ্যে টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বঙ্গবাসীকে সরস্বতী পুজোর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে এবারে তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছে চার লাইনের এক কবিতার মাধ্যমে। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘‘বিদ্যাদেবী সরস্বতী, শিক্ষা দাও, দাও সংস্কৃতি, মন ভরে দিও আলো, বসন্তের দীপ জ্বালো।’ পরে কবিতার নীচে লেখেন, ‘বসন্ত পঞ্চমীতে সরস্বতী পুজোর আন্তরিক অভিনন্দন।’
বসন্ত পঞ্চমীর দিনে বাগদেবীর আরাধনায় ছক ভাঙল কলকাতা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরে থাকা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণী ভবন উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে এবারে যে প্রতিমায় সরস্বতী পুজো হচ্ছে তা যেমন সেই স্কুলের এক ছাত্র তৈরি করেছে তেমনি পুজো করলেন এক ব্রাহ্মণকন্যা যে ওই স্কুলেরই ছাত্রী। ছক ভাঙার এই পথ অবশ্য পড়ুয়াদের দেখালেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষ। স্কুলের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র শুভদীপ শীল এবারে স্কুলের প্রতিমা গড়েছে। তার বক্তব্য, ‘দেখে দেখেই মূর্তি বানানো শিখেছি। অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল স্কুলের ঠাকুর নিজের হাতে গড়ে তুলবো। প্রধান শিক্ষকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রায় ২ মাস লেগেছে প্রতিমা তৈরি করতে।’ অন্যদিকে স্কুলেরই মাধ্যমিকের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে বেড়ে ওঠার সূত্রে পুজোর বিষয়ে তালিম নিয়েছেন বাবার কাছ থেকে। সরস্বতী পুজোয় কিভাবে মন্ত্রপাঠ করা হবে, কিভাবে সাজানো হবে পুজোর উপাচার, তা নিয়ে প্রায় ৩ মাস ধরে অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছে শর্মিষ্ঠা।
এদিন নিজের হাতে বিদ্যাদেবীর পুজো করতে পেরে শর্মিষ্ঠা খুবই উচ্ছ্বসিত। তাঁর বক্তব্য, ‘এটা খুবই ইতিবাচক ভাবনা। আমাদের সমাজে অনেক কুসংস্কার আছে। সেগুলো ভেঙে যাতে এগিয়ে যেতে পারি, সেটা ভেবেই প্রধান শিক্ষক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোনও শাস্ত্রে লেখা নেই উপনয়ন না হলে, পুজো করা যাবে না। নারীরাও সবকিছু পারেন, এটাই প্রমাণিত হচ্ছে।’ শর্মিষ্ঠার বাবা শেখর চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘হিন্দু ধর্মে কোথাও লেখা নেই মেয়েরা পুজো করতে পারবে না। মেয়েকে দিয়ে স্কুলে সরস্বতী পুজো করানোর সিদ্ধান্তকে আমি সাদরে গ্রহণ করেছি। সরস্বতী পুজোয় পুরোহিতের আসনে স্কুলের ছাত্রীকে বসানোর এমন সাহসী ভাবনার জন্য প্রধান শিক্ষক মনোজ ঘোষকে কুর্নিশ জানাই।’