নিজস্ব প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার(Federal Structure) মাধ্যমে যে দেশ চলছে সেখানেই কিনা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বার বার অভিযোগ উঠছে একের পর এক অসাংবিধানিক পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার। যে সিদ্ধান্তে রাজ্যগুলি শুধু যে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল তাই নয়, কার্যত ধাক্কা লাগছিল দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাতেই। এর বিরুদ্ধেই বার বার সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বার বার তিনি বলেছেন দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে বজায় রাখতে। জোর দিয়েছেন কেন্দ্র ও রাজ্যের সমন্বয়ের(Central-State Coordination and Cooperation) ওপরে। সহযোগিতার ওপরে। কেন্দ্র যেভাবে বিরোধী দল পরিচালিত রাজ্যগুলিকে দমন করার পথে হাঁটা দিয়েছে সেই নিয়ে বার বার সরব হয়েছেন বাংলার অগ্নিকন্যা। দেরিতে হলেও এবার সেই কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কথা শোনা গেল খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) গলাতেও। দেশের দ্রুত ও সার্বিক, দীর্ঘস্থায়ী অথনৈতিক বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব রাজ্যকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কার্যত যা বলে দিচ্ছে মমতার প্রতিবাদ ভুল ছিল না। মমতা যে পথে হাঁটার কথা বার বার বলেছেন সেই পথেই আজ হাঁটা দিতে হচ্ছে কেন্দ্রের সরকারকেও।
আরও পড়ুন চাকরির আন্দোলনকারীদের প্রতীকী হাতিয়ার এবার দিদির দূত
ঠিক কী হয়েছে? শুক্রবার দিল্লিতে দেশের সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে রাজ্যে রাজ্যে বেকারত্ব কমানোর জন্য ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে। মজার কথা দেশের মধ্যে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের(MSME) ক্ষেত্রে বাংলা সবার থেকে বেশি এগিয়ে আছে। মমতা বার বার এই ক্ষেত্রে জোর দিয়েছেন। কেননা এই ধরনের শিল্প স্থাপনের জন্য মোটা অঙ্কের বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় যা এখনকার ভারী শিল্প তৈরি করতে পারে না। এবার মমতার দেখানো সেই পথেই হাঁটা দিচ্ছে মোদি সরকারও। কথায় কথায় যে বিজেপির নেতারা মমতাকে শিল্পবিরোধী বলে আক্রমণ শানেন তাঁরা এবার কী বলবেন সেটা এখন তাঁদেরই ভাবতে হবে। শুক্রবারের বৈঠকে, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যগুলিকে পরিকাঠামোগত লগ্নি, বিনিয়োগের প্রশ্নে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করা, মহিলা স্বশক্তিকরণ, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ওপরেও জোর দিতে বলেছেন। বিভিন্ন পরিকাঠামোগত প্রকল্প সময়ে শেষ করা, একাধিক রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলিতে জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যা দূর করা, আগত সমস্যাগুলি নতুন পথে হেঁটে সমাধানের প্রশ্নে বাড়তি জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন নন্দীগ্রাম দিবসে শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবি কুণালের
কিন্তু মজা হচ্ছে এসব কথা তো গত ১১ বছর ধরেই বলে আসছেন মমতা। কেন্দ্রের হাজারো বিরোধিতা, রাজনৈতিক দলগুলির আহাজারো গালিগালাজ অতিক্রম করে তিনি বাংলাকে আজ এক শক্ত জমির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। এটা ভাল যে মমতার দেখানো পথেই এবার হাঁটা দিয়েছে মোদি সরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রী শুক্রবারের বৈঠকে কেন্দ্র-রাজ্য পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি মেনে নতুন ভারত গড়তে কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে রাজ্যগুলিকে তাল মিলিয়ে চলার পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাহলে মোদিবাবু, আমাদের রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে খড়গহস্ত হয়েছিলেন আপনারা সেটি কী এবার তাঁর মাথার পাশ থেকে তুলে নেবেন? নাহলে তো কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার পূর্ণাঙ্গতা আসবে না! শুক্রবারের বৈঠকে রাজ্যের তরফে উপস্থিত ছিলেন বাংলার মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। ঘটনা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মুখে কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্ক, বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে উন্নয়ন, লগ্নির পরিবেশ তৈরির কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে গত ৮ বছরে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাঙার একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এখন দেখার বিষয় মমতাকে সঠিক মেনে নিয়ে আগামী দিনে মোদি কোন পথে হাঁটতে থাকেন।