নিজস্ব প্রতিনিধি: নাম তাঁর নিসার আলি(Nisar Ali)। বাড়ি মুর্শিদাবাদ(Murshidabad) জেলার কান্দি(Kandi) থানার ভবানন্দপুর গ্রামে। সেই নিসারকেই কার্যত নতুন জীবন দিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল(Calcutta Medical College and Hospital)। কেননা টিউমারের কারণে নিসারের বাঁ পা বাদ দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু সেই বিপত্তি এড়ানো গিয়েছে কলকাতার এই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায়। কিছুদিন আগেই নিসারের পায়ে অপারেশন করেছিলেন এই সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। খুব সহজ সেই অপারেশন ছিল না। ৪ ঘন্টা ধরে চলেছিল সেই অপারেশন। এখন চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন সেই অপারেশন সম্পূর্ণ ভাবে সফল হয়েছে। এর ফলে আগাম্নী ২-৩ মাসের মধ্যেই ফের নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারবে নিসার। ফিরতে পারবে তাঁর পুরাতন স্বাভাবিক জীবনে। আর এই সবটাই হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) চালু করা স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের(Sasthasathi Card) জন্য।
জানা গিয়েছে, নিসারের বাঁ পায়ের উরুর মাঝামাঝি জায়গাতে টিউমার হয়েছিল যার দরুন তাঁর ফিমার বোনের সবথেকে শক্ত অংশ যাকে চিকিৎসকেরা ডাক্তারির পরিভাষায় ডায়াফাইসিস বলেন, সেটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। তার জেরে নিসারের বাঁ পায়ের চলার ক্ষমতাই যে হারিয়ে গিয়েছিল তাই নয়, সেই পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতেও ভুলে গিয়েছিলেন নিসার। মাত্র ২০ বছর বয়সেই তাঁকে লাঠি হাতে চলাফেলা করতে হচ্ছিল খুব কষ্ট করে। মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা তাঁর পা বাদ দেওয়ার বার্তা দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু হার মানেননি নিসারের পরিবার। কেননা তাঁদের হাতে ছিল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। সেই কার্ড সম্বল করেই তাঁরা নিসারকে নিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। দেখান কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। সেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের অভিমত, ডায়াফাইসিস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিসারের বাঁ পা কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় সেভাবে ছিল না। হাড়ের কার্যকর অংশটি বাদ দিলে নিসারের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে পড়ত। তাই বিকল্প পথ অবলম্বন করেন তাঁরা।
কী সেই পথ? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নিসারের কোমরের হাড় ইলিয়াক এবং পায়ের হাড় ফিবুলা দিয়ে একটি দীর্ঘ বোন গ্রাফ্ট তৈরি করেন হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জেনরা। এক ফুট লম্বা ধাতব পাতের সঙ্গে সেই দুটি অংশ স্ক্রু দিয়ে জুড়ে তৈরি হয় সেই লম্বাটে বোন গ্রাফ্ট। পায়ের ফিমোরাল ধমনি যাতে সামান্যতম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই কথা মাথায় রেখে এরপর অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে টিউমার আক্রান্ত উরুর হাড় ও মাংস কেটে বাদ দেওয়া হয়। তারপর হাইড্রোজেন পারক্সাইড দিয়ে জায়গাটি জীবাণুমুক্ত করে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয় সেই বোন গ্রাফ্ট। এইভাবে তিন ধাপে সম্পূর্ণ হয় নিসারের বাঁ পায়ের রিকনস্ট্রাকশনের অপারেশন। এখন নিসার অনেকটাই ভাল আছেন। আপাতত এক-দেড় মাস তাঁর পায়ে ফিজিওথেরাপি চলবে। তারপরেই চিকিৎসকেরা তাঁকে নিজের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতে, আস্তে আস্তে হাঁটাচলা করার ছাড়পত্র দেবেন। তাঁদের আশা মাস ৬য়ের মধ্যেই নিসার তাঁর আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন।
আর এই গোটা বিষয়টির জন্য নিসারের পরিবার কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ তো দিয়েছেনই সেই সঙ্গে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি। কেননা পায়ের হাড় প্রতিস্থাপন করার জন্য এই অপারেশন বেসরকারি ক্ষেত্রে করলে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা খরচ পড়ত। গরীব নিসারের পরিবারের পক্ষে তা করা সম্ভব ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থাকায় সেই অপারেশন বাংলার সরকারি হাসপাতালে হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। মুখ্যমন্ত্রী এই কার্ড চালু না করলে আজ নিসার তাঁর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত না। মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই এই ঘটনা সম্ভব হয়েছে।