নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্য রাজনীতিতে(State Politics) বিজেপি বিধানসভার ভিত্তিতে প্রধান বিরোধী দল। অথচ এই দলটার পায়ের নীচ থেকে মাটি ক্রমশই সরে চলেছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে হওয়া একাধিক নির্বাচনে তাঁরা যে শুধু হেরেই চলেছে তাই নয়, কোথাও কোথাও জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে, কোথাও বা দলের প্রার্থী তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে দৌড় শেষ করছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে চব্বিশের ভোটে হাতে পেনসিল ছাড়া যা আর কিছুই থাকবে না সেটা বিলক্ষণ বুঝেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। আর তাই এখন থেকেই তাঁরা কোমর বাঁধছেন ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য। কিন্তু সেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেই চোখ কপালে উঠছে দলের শীর্ষ নেতাদের। কেননা বাংলার কোনও জেলাতেই এখন আর ৫০০’র বেশি সক্রিয় কর্মীর দেখা মিলছে না। কোথাও কোথাও তা আবার ১০০-তে নেমে এসেছে। কর্মীদের অভাবে দলের মণ্ডল কমিটি থেকে শুরু করে যুব কমিটি, মহিলা কমিটি, তপশিল কমিটি কিছুই গঠন করা যাচ্ছে না। হ্যাঁ এটাই বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) বর্তমান অবস্থা, যা দেখে মাথায় হাত পড়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।
গত শনিবার কলকাতার(Kolkata) ন্যাশনাল লাইব্রেরি(National Library) অডিটোরিয়ামে দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন দলের এ রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য(Amit Malabya)। বঙ্গ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকেই সামনে উঠে আসে দলের বর্তমান দুরাবস্থার ছবি। দলের একের পর এক জেলা সভাপতি জনিয়ে দেন তাঁর জেলায় দলের সক্রিয় কর্মীর সংখ্যা কোথাও ৩০০’র কম, কোথাও ৫০০’র কম। কোথাও কোথাও তা ১০০-ও নয়। দলের নিয়ম অনুসারে, কোথাও মণ্ডল কমিটি গঠন করতে গেলে সেখানে নূন্যতম ৬১জন কর্মী চাই। বহু জায়গায় এই সংখ্যাটাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সিংহভাগ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মণ্ডল কমিটিও গঠিত হয়নি। ছবিটা আলাদা নয় দলের যুব মোর্চা, মহিলা মোর্চা ও তপশিলী মোর্চার ক্ষেত্রেও। সেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে কমিটি গঠন করতে গেলে নূন্যতম ২১জন সক্রিয় কর্মী থাকা চাই। কিন্তু সেই সংখ্যক কর্মীও পাওয়া যাচ্ছে না বলে ওই সব মোর্চার কমিটি গঠনের কাজও থমকে রয়েছে। একই অবস্থা দলের আরও ৪টি মোর্চার। বুথ স্তরের ছবিটা আরও খারাপ। কোথাও কোথাও দলের পার্টি অফিস খোলা তো দূর, দলের পতাকা বইবার জন্যও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিন্তু এহেন দূরাবস্থা কেন? বঙ্গ বিজেপির নেতাদের দাবি, আদি নেতা ও কর্মীদের গুরুত্বহীন করে দেওয়ার জেরে এই দুরাবস্থা। এরা কার্যত সবাই বসে গিয়েছেন। কেউ আর পার্টি মুখো হচ্ছেন না। দল যে নব্য নেতা ও কর্মীদের নিয়ে লম্ফজম্ফ করত বা এখনও করে চলেছে তাঁরা এখন দলে দলে তৃণমূলের দিকে পা বাড়াচ্ছেন। দলের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাইরের এলাকা থেকে লোক ভাড়া করে আনতে হচ্ছে। সব থেকে বড় কথা, দলের রাজ্য নেতৃত্বের চূড়ান্ত অকর্মণ্যতা। তাঁরা কলকাতা ছেড়ে বেরোতে চান না। দলের কোনও কর্মসূচি নেই, আন্দোলন নেই। যাবতীয় লম্ফজম্ফ শুধু সোশ্যাল মিডিয়া আর আদালতে। দলের নীচুতলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের যোগাযোগ তো দূরের কথ্যা জেলা নেতৃত্বেরও যোগাযোগ নেই। এভাবে চলতে থাকলে চব্বিশে লড়াই তো বহু দূর সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও লড়াই করার জন্য প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু দলের এহেন বেহাল দশা কিছুতেই মুখ ফুটে স্বীকার করতে চায় না দলের রাজ্য নেতৃত্ব। তাঁরা সব কিছুর জন্য তৃণমূল, পুলিশ আর রাজ্য সরকারকে দায়ী করেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে দেন। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলায় বিজেপি ক্রমশই ডুবে চলেছে।