কৌশিক দে সরকার: আরামবাগ(Aarambag), হুগলি(Hooghly) জেলার এক শহর। সেই শহরের নামেই মহকুমা। এবার সেই মহকুমার পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) দিকে তাকিয়ে তামাম বাংলা। কেননা এই মহকুমার মানুষের ভোল পরিবর্তন যে দ্রুত গতিতে হয়েছে তা বাংলার আর কোনও এলাকায় দেখা যায়নি। বাম জমানায় এই এলাকা ছিল সিপিআই(এম)(CPIM) ও ফরওয়ার্ড ব্লকের(Forward Block) শক্ত ঘাঁটি। এই দুই দলের মধ্যে সেখানে আকচাআকচিও কিছু কম ছিল না। দুই দল বামফ্রন্টের বড় ও মেজ শরিক হওয়া সত্বেও তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ, খুনোখুনির ঘটনাও ঘটেছে বিস্তর বাম জমানার ৩৪ বছরে। অনেকে মারাও গিয়েছেন সেই সব লড়াইয়ে। বাম জমানার অবসান ঘটতেই দেখা গেল দুই দলেরই সেখানে কোমর ভেঙে গিয়েছে। আর সেই সুযোগে প্রথমে তৃণমূল(TMC) যেমন এলাকার দখল নিয়েছিল তেমনি পরে সেখানে থাবা গেড়েছে বিজেপি(BJP)। কার্যত বাম ভোটই চলে গিয়েছে পদ্মের ঝুলিতে। এখন দেখার বিষয় এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে আরামবাগের দখল কার হাতে যায়, বিজেপির না তৃণমূলের।
আরও পড়ুন অগ্নিপরীক্ষা গুরুংয়ের, পরীক্ষা তৃণমূলেরও, আত্মবিশ্বাসী অনীত
আরামবাগ মহকুমায় রয়েছে ৬টি ব্লক। এগুলি হল – আরামবাগ, পুরশুড়া, গোঘাট-১ ও ২ এবং খানাকুল ১ ও ২। এই মহকুমার মধ্যেই পড়ে আরামবাগ পুরসভাও। ২০১১ সালের সেনসাস অনুযায়ী আরামবাগ মহকুমার জনসংখ্যা ১২ লক্ষেরও বেশি। ২০২১ সালে জনগণনা না হলেও প্রাপ্ত তথ্য বলছে এখন ওই মহকুমায় জনসংখ্যা ২ লক্ষের সামান্য বেশি। এর মধ্যে দেড় লক্ষ মানুষ বসবাস করেন মহকুমার ৬৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বাম জমানায় এই সব গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল বামেদের দখলে। তৃণমূলের জমানায় ৫০টিরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। কিন্তু মহকুমায় বিজেপির উত্থানের পর থেকেই কার্যত কড়া চ্যালেঞ্জের মুকেহ পড়ে গিয়েছে তৃণমূল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই মহকুমায় বিরোধী শিবিরের প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করা থেকে বিরোধী শিবিরের মানুষদের ভোটদান পর্যন্ত বিস্তর অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কার্যত তাঁদের অভিযোগ ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘ভোট লুঠ’ হয়েছে। সেই অভিযোগের ছাড়া পড়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। সেখানে তৃণমূল জিতলেও জয়ের ব্যবধান ছিল মাত্র ১ হাজার ১৪২টি ভোটের। ওই নির্বাচনে আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের ভোট কমেছিল ১০ শতাংশেরও বেশি, বিজেপি ভোট বেড়েছিল ৩২ শতাংশের বেশি। বামেদেরও ভোট কমেছিল ২২ শতাংশের বেশি।
আরও পড়ুন মনোনয়ন পেশের সময়সীমা পর্যাপ্ত নয়, পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের
কার্যত সেই নির্বাচনেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল আরামবাগ মহকুমায় তৃণমূল বিরোধী ভোট জমা হয়েছে বিজেপির বাক্সে। একই সঙ্গে সেখানে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষই হয়ে উঠেছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, ওই নির্বাচনে কেন তৃণমূলের জয় এত কম ব্যবধানে হয়েছে সেটা জানতে গিয়ে উঠে এসেছিল যে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেখানকার মানুষ ভোটই দিতে পারেননি। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে তাঁরা উনিশের লোকসভায় ভোট দিতে পেরেছিলেন। তাতেই তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ওই জায়গায় নেমে যায়। একুশের ভোটেও দেখা যায় আরামবাগ মহকুমা জুড়ে ক্লিন সুইপে জিতেছে বিজেপি। মহকুমার ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রেই জিতে যায় বিজেপি। পুরশুড়ায় বিজেপি জেতে ২৭ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে, খানাকুলে বিজেপি জেতে ১২ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে, আরামবাগে ৭ হাজারের বেশি ও গোঘাটে ৪ হাজারের বেশি ভোটে জেতে বিজেপি।
আরও পড়ুন গাড়ি বিক্রির হারে এগিয়ে মমতার বাংলা, পিছিয়ে মোদির ভারত
স্বাভাবিক ভাবেই এবার মূল নজর থাকবে এই জয়ের ধারা কী অব্যাহত রাখতে পারবে বিজেপি? মহকুমার ৬৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে, ৬টি পঞ্চায়েত সমিতিতে এবং ১৬টি জেলা পরিষদের আসনে বিজেপি এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কী ফল করে সেই দিকেই তাকিয়ে থাকবেন সকলে। যদি বিজেপি কোনও ধাক্কা দিতে পারে তৃণমূলকে এই নির্বাচনেও তাহলে ২০২৪’র ভোটে এই আসন তৃণমূল আদৌ ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। তবে এই নির্বাচনে যদি বামেরা ঘুরে দাঁড়ায় আরামবাগের মাটিতে তাহলে কিন্তু বিজেপির কপালে দুঃখই থাকবে। সেক্ষেত্রে লাভ হবে তৃণমূলেরই। ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতোই এবারেও পঞ্চায়েতের ৩টি স্তরেই নিরঙ্কুশ আধিপত্য ধরে রাখবে জোড়াফুল।