নিজস্ব প্রতিনিধি: সকাল থেকেই গোটা পাড়া থমথমে। কার্যত বাকরুদ্ধ গোটা এলাকার মানুষ। কেউ ভাবতেই পারছেন না গতকাল রাতে একা হাতে একজন মহিলা পাড়ারই ৪জন মানুষকে চিরতরে শেষ করে দিয়েছেন। কিন্তু কেন? সত্যিই কী সম্পত্তি বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে নাকি নিজের পরকিয়া ঢাকতে এই নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের(Murder) অবতারণা? কার্যত এখন এই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে চলেছেন হাওড়া(Howrah) পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকেরা। কেননা বুধবার রাতে হাওড়া শহরের গোরা বাজার এলাকার এম সি ঘোষ লেনের(M C Ghosh Lane) একটি বাড়িতে ঘটে গিয়েছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বাড়ির ছোট বউয়ের হাতে খুন হয়ে গিয়েছেন মাধবী ঘোষ(৬৫), তাঁর বড় ছেলে দেবাশিষ ঘোষ(৪২), দেবাশিষের স্ত্রী রেখা ঘোষ(৩৫) এবং তাঁদের মেয়ে তিয়াষা ঘোষ(১৪)। আর এই খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছেন মাধবী দেবীর ছোট ছেলে দেবরাজ ঘোষের স্ত্রী পল্লবী ঘোষ।
জানা গিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দুই ভাইয়ের ঝগড়া বাঁধে। সেই সময় হঠাৎই কাটারি হাতে বাড়িতে দেবাশিষবাবুদের অংশে ঢুকে এলোপাথাড়ি সবাইকে কোপাতে থাকেন পল্লবী। সেই কাজে আবার মদত করেন দেবরাজ। পাড়ার লোকেরাই পরে এই নৃশংস খুনের ঘটনা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। রাতেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন পল্লবী। তবে ঘটনার পরেই গা ঢাকা দিয়েছে দেবরাজ। পাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল আর সেই বিবাদকে ঘিরে নিত্যদিনই তাঁদের বাড়িতে ঝগড়াঝাঁটি অশান্তি হত। কিন্তু সেই অশান্তির জেরে এতবড় ঘটনা যে ঘটে যাবে সেটা পাড়ার কেউই ভাবতে পারেননি। পুলিশ(Police) ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পাড়ার লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদও করছে। হাওড়া থানায় পল্লবীকে এখন রাখা হয়েছে। এদিনই তাকে আদালতে তোলা হবে। তবে পুলিশকে যেটা ভাবাচ্ছে তা হল খুনের কারণ। পল্লবী এদিন থানার মধ্যে খুবই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। বার বার সে একটা কথাই জানতে চাইছে যে সবাই মারা গিয়েছে কিনা। কখনও কখনও কান্নাকাটিও করছে। আর তা দেখে তদন্তকারীদের ধারনা পল্লবী কিছুটা হলেও মানসিক ভাবে হয়তো অসুস্থ।
যদিও এর পাশাপাশি পুলিশ ভিন্ন একটি বিষয়ও জানতে পেরেছে যা এই ঘটনার তদন্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সূত্রের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পেরেছে, পল্লবী পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। আর সেই ব্যক্তি দেবরাজেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু যার হামেশাই ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। সেই সম্পর্ক দেবরাজের কানে তুলেছিলেন দেবাশিষবাবু ও তাঁর স্ত্রী। কিন্তু সেই সম্পর্ক নিয়ে মাথা ঘামাতে চাননি দেবরাজ। যদিও এই সম্পর্কে মানতে চাননি মাধবীদেবী, দেবাশিষবাবু ও তাঁর স্ত্রী। আর তার জেরে পল্লবীর সঙ্গে মাধবীদেবী, দেবাশিষবাবু ও তাঁর স্ত্রীর সম্পর্ক চূড়ান্ত তিক্ততাপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর তার জেরেই এই হত্যাকাণ্ডের অবতারণা বলেই মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকেরা। তাই দেবরাজ ও তার বন্ধুর সন্ধান এখন শুরু করেছে পুলিশ।